ঢাকা,

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


যৌথবাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর যুবদল নেতার মৃত্যু, শরীরে আঘাতের চিহ্ন

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:২৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যৌথবাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর যুবদল নেতার মৃত্যু, শরীরে আঘাতের চিহ্ন

কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর এক যুবদল নেতা মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মৃত যুবদল নেতার নাম তৌহিদুল ইসলাম (৩৫)। পরিবার বলছে, তৌহিদুলের শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে।

তৌহিদুল কুমিল্লা সদর উপজেলার পাঁচথবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি পাঁচথবী ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন তিনি। গত রোববার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে বাড়ি আসেন।

যুবদল নেতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ২টার দিকে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের কল করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পারে পড়ে আছে। সেখান থেকে পুলিশ প্রথমে তৌহিদুলকে সদর হাসপাতালে, পরে সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

তৌহিদুল ইসলামের বড়ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে ও সাদা পোশাকের কয়েকজন আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যায়। তৌহিদুলকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি। পরদিন শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তারা আবার আমার ভাইসহ আরেকজনকে নিয়ে বাড়িতে এসে এক ঘণ্টা বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালায়। কোনো অস্ত্র না পেয়ে আমার ভাইকে আবারও নিয়ে যায় তারা।’

আবুল কালাম বলেন, ‘শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পুলিশ আমাদেরকে কল করে জানায়, গোমতী বিলাসের কাছে আমার ভাই আহত অবস্থায় পড়ে আছে। আপনারা হাসপাতালে আসেন, আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিচ্ছি। হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তৌহিদুলের শরীরে অনেক জখমের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।’

এই বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন দুপুরে হাসপাতালে তাঁর মরদেহ পাওয়া গেছে। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই জানিয়ে শিবলু বলেন, ‘অতিরিক্ত মারধরের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এটা বলাই যায়। যতদূর জানি তাঁর (তৌহিদুল) বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পুলিশও কিছু বলছে না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন, তাঁর দুই মেয়ে কোরআনে হাফেজ। তাঁর এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভির আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায় হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’

যুবদল নেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পাই, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন গোমতী বিলাসে তৌহিদুল নামে একজন আহত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

পুলিশ কর্মকর্তা মাহিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তৌহিদুলের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’

এদিকে, ঘটনার পর এই বিষয়ে যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি।

টিএইচ

News