কোচের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের দ্বন্দ্ব, যা বললেন বাফুফে সভাপতি

বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল রাজনৈতিক সফরে ইংল্যান্ডে রয়েছেন। এদিকে ঢাকায় নারী ফুটবলে উত্তপ্ততা চরমে। বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারের ওপর নানা অভিযোগ এনে তার অধীনে অনুশীলন করতে চান না ১৫-১৭ জন নারী ফুটবলার।

এরপরও ফেডারেশন বাটলারের ওপরই আস্থা রাখলে এই ফুটবলাররা ফেডারেশন ক্যাম্প ত্যাগেরও ঘোষণা দিয়েছেন কিছুক্ষণ আগে। 

নারী ফুটবলাররা কঠোর অবস্থান ঘোষণা করলেও তারা বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। তার ওপরই এখন নারী ফুটবলের সংকট নিরসনের মূল ভার পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বাফুফে সভাপতি লন্ডন থেকে বলেন, 'আসুন, আমরা কেউ কঠোর বা অধৈর্য্য না হই। কিছুটা সময় ও আন্তরিকতা নিয়ে অবশ্যই একটা পারস্পরিক সমাধানে পৌঁছাতে পারব। আমি এতে আত্মবিশ্বাসী।'

বৃটিশ কোচ পিটার বাটলার বাফুফেতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসেছিলেন বাফুফে একাডেমীর কোচ হয়ে। কয়েক মাস পর সাইফুল বারী টিটুর বদলে বাটলারকে হেড কোচ করেন তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। জুনে চাইনিজ তাইপে ম্যাচ দিয়ে বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের দূরত্ব প্রকাশ শুরু হয়। অক্টোবর কাঠমান্ডু সাফে যেটা বড় আকার ধারণ করে।

সাফ চ্যাম্পিয়ন হলেও নারী ফুটবলাররা বাটলারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন। বাটলারকে পুনরায় নারী দলের কোচ করলে তারা ক্যাম্পে না আসার ও ফুটবল ছাড়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাফুফে সেই দিকে কর্ণপাত না করে উল্টো নারীদের দায়িত্বে বাটলারকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। এতে নারী ফুটবলাররা অত্যন্ত মনক্ষুণ্ন হয়েছেন। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বাফুফের মহিলা উইং ও নীতি নির্ধারকরা কেন এই সংকট দূর করতে পারেনি বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে প্রশ্ন করলে তার মন্তব্য, 'নো কমেন্টস।’

সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই সাবিনাদের সঙ্গে বাফুফের চুক্তি শেষ হয়। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। কোচের আচরণের পাশাপাশি এ নিয়েও নারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। এই সম্পর্কে সভাপতির বক্তব্য, 'আমরা আরও বেশি ফুটবলারকে পেশাদার চুক্তির আওতায় আনার পাশাপাশি আরও পেশাদার করার জন্য যাচাই-বাছাই করছি।’

চুক্তি নিয়ে যেমন বিলম্ব তেমনি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বোনাসেরও কোনো খোঁজ নেই। ৯ নভেম্বর বাফুফের নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় সাফ চ্যাম্পিয়ন দলকে দেড় কোটি টাকা বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাফুফের তহবিলে আর্থিক সংকট রয়েছে। তাই নির্বাহী কমিটির সকলে মিলে সেই অর্থ প্রদানের আলোচনা হয়। নির্বাচনে বাফুফে কর্মকর্তারা পদের জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করলেও ফুটবল ও ফেডারেশনের স্বার্থে অনেকটাই যেন নিশ্চুপ। এই বিষয়ে সভাপতির মন্তব্য, 'বোনাসের অর্থ নির্বাহী কমিটির সকল সদস্যের অবদানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে, সম্পূর্ণ তহবিল নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বোনাস পরিশোধ করা হবে।'

নারী ফুটবলে সাফল্যে বা কোনো টুর্নামেন্টে সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তাদের লাইন পড়ে যায়। অথচ এই সংকটে বাফুফে কর্তাদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। যদিও নারী ফুটবলে নির্বাহী সদস্য ও নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণই শেষ কথা। অত্যন্ত সংকটময় দিনে আজ নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ ফেডারেশনেই আসেননি।

বেতনভুক্ত সাধারণ সম্পাদক নির্ধারিত সময়ের আগেই আজ ফেডারেশন ত্যাগ করেছেন। মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান নানা সময় সাংবাদিকদের ডেকে বক্তব্য দিলেও এই সংকট নিয়ে ফেডারশেনের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পেতে তাকেও খুঁজে পাচ্ছেন না সাংবাদিকরা। সভাপতি রাজনৈতিক সফরে ইংল্যান্ড থেকেই নারী ফুটবলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন। বাফুফে সূত্রের খবর, বাফুফে সভাপতি লন্ডন থেকে মালয়েশিয়ায় এএফসি’র একটি সভায় যোগ দেবেন। এরপর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ঢাকায় আসার কথা।

ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। নারী ফুটবলের সংকটের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসায় তাদের চোখে পড়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলাম, এনডিসি বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বরাবর দেয়া চিঠিতে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।