রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। এরইমধ্যে অনশনে বসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তবুও দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান ধরে রেখেছেন তারা। সময় বেঁধে দিয়েছেন আজ (শনিবার) বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন সম্পর্কিত ৭ দফা দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকায় ব্যারিকেড কর্মসূচি শুরু হবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে ৭ দফা কর্মসূচি মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসতে হবে। যতক্ষণ এই ঘোষণা না আসবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। ৭ দফা দাবিগুলো হচ্ছে —
১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২০২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩. শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ নতুবা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করতে হবে।
৪. ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম দুইটি বিষয় ‘আইন’ এবং ‘জার্নালিজম’ বিষয়
সংযোজন করতে হবে।
৫. একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৬. শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে।
৭. আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
এর আগে, গতকাল রাত ১১টায় সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্য’ এর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার কথা জানান। সংশ্লিষ্টরা বলেন, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ (উত্তর সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন এলাকা) নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে এই সময়ের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের অনশন চলমান থাকবে।
সংগঠনটি আরও জানায়, ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি অনির্দিষ্ট কালের জন্য পালন করা হবে। রেল ও সড়ক পথ কর্মসূচির আওতায় থাকবে। তবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশ্ব ইজতেমার কথা বিবেচনা করে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ব্যারিকেড শিথিল থাকবে।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোন সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি তাদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
টিএইচ