ঢাকা,

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


হুমকিতে নাঃগঞ্জ জেলায় জনস্বাস্থ্য

নকল-ভেজালের ভিড়ে আসল কোথায় ?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত হয়েছে: ০১:২০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নকল-ভেজালের ভিড়ে আসল কোথায় ?

সংগৃহীত ছবি

মেয়েদের সৌন্দর্য্য চর্চাকে পুঁজি করে নারায়ণগঞ্জের পাইকারী মার্কেটগুলোতে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি। নকল-ভেজাল-মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সামগ্রীতে ছেয়ে গেছে দেশ।নকল হইতে সাবধান’- এই বিজ্ঞাপন এতটাই প্রচলিত যে, কেউ আরসাবধান বাণীহিসেবে কথাটি মানতে চায় না। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলের জন্যই সমান প্রযোজ্য।

ভেজালের সাম্রাজ্যে সবই আছে, শুধুআসলটাইউধাও। ভেজাল খাবার খেয়ে আমরা জাতিকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি, নতুন প্রজন্মকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।

প্যাকেটের গায়ে লেখা দাম থেকে ৪০ টাকা কম রাখলাম আপা। শুধু পরিচিত বলে আমরা ছাড় দিতে পারি। সবার কাছ থেকে লাভ করি না।এমন মিষ্টি ভাষায় দোকানদার নকল পন্য গছিয়ে দেয় ক্রেতাদেরকে। এসব নকল পণ্য ব্যবহার করায় মহিলাদের মুখের দাগ আরো কালচে হয়। তখন দোকানে গেলে দোকানী আরো কিছু নকল কসমেটিক সামগ্রী ধরিয়ে দেয়।গলাকাটা দাম রেখে বলে, ‘আপা এই প্রোডাক্টগুলো বাইরের (বিদেশী) আমরা লাগেজের মাল পাইছি তাই আপনাকে দিলাম।মিষ্টি কথায় মার্কেটে এসে মহিলারা নকল কসমেটিক সামগ্রী কনছে।

পন্ডস স্নো এলোভেড়া জেলি কিনেছেন এক যুবক। বাসায় নেয়ার পর ধরা পড়ে স্নো জেলি দুটোই নকল। দ্বিগুবাবু বাজারে ফলপট্টি পাইকারী মার্কেটে নির্দিষ্ট দোকানে পণ্যটি নিয়ে আসে ওই যুবক। দোকানি পরিচিত। তবুও মাল বদলে দিতে অনীহা প্রকাশ করে। পনের দিন পরে কোম্পানী থেকে আসলে মাল পাবে। দোকানীর কথা শুনে যুবক তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে। অনেকক্ষণ ঝগড়ার পর লোকজন জমে যায়। তখন দোকানী টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়।

কদমরসুল স্টোরে লাইন ধরে তারপর আসল পণ্যটি কিনে বাসায় ফিরে যুবকটি। তখন সে জানতে পারে চেনাজানা বলতে শুধুমাত্র মুখচেনা ক্রেতাদেরকে দোকানদাররা নকল পণ্য গছিয়ে দেয়। মহিলাদের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে রাজ্যের যত নকল কসমেটিক বিক্রি করে কিছু দোকানদার। আসল বলে হাতে তুলে দেয় নকল স্নো, পাউডার, অলিভঅয়েল, পারফিউমসহ কত কি।

কখনো ভিন্ন ভিন্ন আবার কখনো একত্রে খাদ্যে ভেজাল রোধে অভিযান চালায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, রেব ও বাংলাদেশ পুলিশ। তবে অভিযোগ রয়েছে, ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্যের তুলনায় অভিযান যথেষ্ট নয়।

এ বিষয়ে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নাফিয়া ইসলাম বলেন, শহরের মানুষ রূপচর্চা বেশি করেন। অলিগলিতে বিউটি পারলার। না জেনে না বুঝে সবাই ছুটছে ত্বক ফর্সা করার ক্রিমের দিকে। কোন একটা নাম পেলেই মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেই পণ্যটা আসলেই মানসম্মত ক্রিম কিনা সেটা না জেনে শহরের বিভিন্ন মার্কেট থেকে অজানা অচেনা কোম্পানীর তৈরী ক্রীম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন এর স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযোগ পেলে নকল প্রসাধনী জব্দ করতে অভিযান চালায়।

জানাগেছে, প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জে ভেজাল খাদ্যপণ্যে সয়লাব হয়ে পড়ছে শহর-বন্দর-জনপদ। খোলাবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড থেকে শুরু করে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট, কনফেকশনারি, ক্যান্টিন, এমনকি মুদি দোকান পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটেছে নকলের। কোথায় নেই ভেজাল? হাত বাড়িয়ে যা কিছু খাচ্ছি সবকিছুতেই ভেজাল। বাজারে এমন কিছু নেই, যা নকল কিংবা ভেজাল হচ্ছে না। পণ্য ভেরিফিকেশনের জন্য হলোগ্রাম, স্টিকার, স্ক্যানার, আরএফআইডি ট্যাগ, বারকোড ইত্যাদি সিস্টেম চালু আছে। কিন্তু সেসব হলোগ্রাম বা স্টিকারগুলোও যখন নকল করা হয় তখন গ্রাহক কোনোভাবেই আর আসল-নকল আলাদা করতে পারেন না। নকলের ভিড়ে আসল চেনা দায়। দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে ভেজালের গণ্ডি।

সরেজমিন নগরীর চাষাড়া, কালিরবাজার, দ্বিগুবাবুর বাজার, উকিলপাড়া, ডিআইটি মার্কেট, লঞ্চ টার্মিণাল, টানবাজার, নিতাইগঞ্জ আশপাশ এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কোথাও চিকেন টিক্কা, শিক কাবাব, জিলাপিসহ নানা পদে খোলাবাজারে পাওয়া কৃত্রিম রং দেদার ব্যবহার করা হয়। কাবাব পোড়ানোর স্থানের পাশেই রাখা হয়েছে রং মসলামিশ্রিত পাত্র। সেখান থেকে তা বারবার মাংসে ব্যবহার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতারের অপরিহার্য পাঁচটি সামগ্রী হলো মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুণী জিলাপী। তার প্রতিটি তৈরিতেই ভেজাল মিশে নানা ভাবে। মুড়ি ছাড়া ইফতার কল্পনা করা যায় না। সেই মুড়ি আকারে বড় সাদা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড। অথচ রাসায়নিক পদার্থটি কাপড়ের সাথে মিলে সাদা রং করতে ব্যবহৃত হয়।

ক্রেতাদের আকর্ষণে ভেজাল মুড়িই বাজারে বিক্রি করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। চাল সাদা করার জন্য ধান সেদ্ধ করার সময় মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া সার। এই মুড়ি খেলে ডায়রিয়া, আমাশয় থেকে শুরু করে কিডনি বিকল, লিভার সিরোসিস এমনকি মরণঘাতি ক্যান্সারও হতে পারে। এছাড়া মুড়ি খেলে অসময়ে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন।

সূত্রমতে, বিএসটিআই মান কোড সমর্থন করে- এমন পণ্যের বাজারজাতকরণের আগেই পণ্যের গুণগত মানের নিশ্চয়তা (পণ্য পরিক্ষা) বিএসটিআই সিএম সনদ গ্রহণ করতে হয়। সিএম সনদ ছাড়া পণ্যের উৎপাদন বাজারজাত করা যায় না। পণ্যের মোড়কে সিএম সনদের নম্বরও উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু অনেক

টিএইচ

News