ঢাকা,

২০ এপ্রিল ২০২৫


তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের আদর্শিক রাজনীতি প্রয়োজন

আবু সালেহ মো. ইউসুফ

প্রকাশিত হয়েছে: ১৬:০২, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৬:১৮, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের আদর্শিক রাজনীতি প্রয়োজন

ছবি: আবু সালেহ মো. ইউসুফ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন একটি বড় পরিবর্তনের সময় এসেছে। শুধু জাতীয় পর্যায় নয়, স্থানীয় রাজনীতির শেকড়েও এই পরিবর্তনের ছাপ পড়া জরুরি। বহু বছর ধরে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা গড়ে তুলেছি, তা তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত বহু জায়গায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজধানীর বস্তি এলাকার রাজনীতি ও সেখানে গড়ে ওঠা প্রভাববিস্তারী গোষ্ঠী।

অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর নানা বস্তিতে বসবাসরত জনগোষ্ঠী বারবার রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থসাধনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তারা মূলত ভোট, মিছিল কিংবা জনসভায় ভিড় বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হলেও—তাদের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজও দেখা যায়নি। দুঃখজনকভাবে, এই জনগোষ্ঠীর জন্য কোনো সরকারই স্থায়ী পুনর্বাসন বা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়নি।

এতে যে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে, তা শুধু অবহেলিত নাগরিকত্ব নয়, বরং একটি সামাজিক অনিয়মও গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব বস্তিতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে—কখনো বিএনপির আমলে, কখনো আওয়ামী লীগের সময়। একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী রাজনৈতিক ব্যানার বদলালেও অপরাধের ধরন থাকে এক।

বিএনপির সময় তারা দলের পতাকা লাগিয়ে মাদক, দখল ও চাঁদাবাজিতে ছিল সক্রিয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবার সেই একই কাজ চলেছে নতুন রঙের ব্যানারে। এখন আবার শোনা যায়—‘বিএনপি আসবে’, এই আশায় আগের মতো একই অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। অর্থাৎ তারা আদতে কোনো দলের আদর্শিক সমর্থক নন—ক্ষমতা যার, স্বার্থ তার। রাজনীতির এমন ব্যবহারে অবক্ষয় শুধু সংগঠনের নয়, গোটা সমাজের।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো অনেক এলাকায় দেখা যায়—ইউনিট, ওয়ার্ড কিংবা থানা পর্যায়ের নেতা নির্বাচিত হন কেবল একটি বসতির মধ্য থেকে, যাদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে সরকারি জমি দখল করে, সেখান থেকে ঘর ভাড়া তুলে জীবিকা চালান। তারা ক্ষমতার ছায়ায় সুবিধাবাদী হয়ে ওঠেন। অথচ একই এলাকায় যারা শিক্ষিত, চিন্তাশীল, সমাজসচেতন—তারা রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

এই বাস্তবতায় দুটি বিষয় অত্যন্ত জরুরি।

প্রথমত, বস্তিবাসীদের মানবিক পুনর্বাসন। রাজধানীর বাইরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আবাসিক এলাকা গড়ে তুলে এই মানুষদের পুনর্বাসন করতে হবে। তা না হলে তারা চিরকাল রাজনৈতিক স্বার্থের পণ্যে পরিণত হবে। পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে—যাতে তারা সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মানোন্নয়ন। ইউনিট-ওয়ার্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনে শিক্ষা, নৈতিকতা ও জনসেবার মানদণ্ড নির্ধারণ করা উচিত। রাজনৈতিক দলের উচিত এসব বিষয়ে কঠোর নীতিমালা তৈরি করা। একজন কর্মীর ব্যর্থতা বা দুর্নীতি পুরো দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে—এটি আজকাল মানুষ খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে।

রাজনীতি যদি আদর্শবিহীন, উদ্দেশ্যহীন এবং দায়িত্বহীন হয়, তবে তা দেশ ও জনগণের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আর সে কারণেই সময় এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আত্মসমালোচনার। দলগুলোকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিখে, নিজেদের প্রেক্ষাপটে প্রয়োগযোগ্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা চর্চা এবং মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

জনগণ আর অন্ধ নয়। তারা জানে কে সেবা করে, আর কে শুধু ক্ষমতা ভোগ করে। তাই যদি কোনো দল ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চায়, তাদের উচিত এখন থেকেই তৃণমূল থেকে শুদ্ধ রাজনীতি চর্চা শুরু করা—যেখানে মানুষ ও মূল্যবোধ হবে কেন্দ্রবিন্দু।

ইউ

News