ঢাকা,

০৮ জানুয়ারি ২০২৫


বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ২০২৫ সালের সম্ভাব্য চিত্র

আবু সালেহ মো. ইউসুফ

প্রকাশিত হয়েছে: ২১:৫৪, ১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৭:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: ২০২৫ সালের সম্ভাব্য চিত্র

ছবি: আবু সালেহ মো. ইউসুফ

২০২৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তাদের রাজনীতি প্রায় অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে, যেখানে প্রচলিত ধারার বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতও প্রাসঙ্গিক ভূমিকা রেখেছে।

প্রচলিত ধারার আরেক রাজনৈতিক দল সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পাটি (জাপা) সাবেক সরকারি দলে থাকায় তাদের অবস্থানও কিছুটা ব্যাকফুটে যদিও তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে বলে দাবির উপর ভর করে সময়ের সাথে অবস্থান এগিয়ে নিবে বলে মনে করা হচ্ছে। বামপন্থি দলগুলো তাদের অবস্থান জনমুখী করতে প্রচারপ্রসার চালিয়ে যাচ্ছে যদিও এলাকাভিত্তিক প্রচারণা নেই বললেই চলে।

আওয়ামী লীগের সংকটময় অবস্থা
ক্ষমতা হারানোর পর আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো চরম সংকটে পড়েছে। তাদের কর্মীরা হত্যার শিকার হচ্ছেন, শারীরিক নির্যাতন এবং সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। ছাত্রলীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা দলটির উপর আরেকটি বড় আঘাত। সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিসরে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এখন নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করতেও ভয় পাচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। তাদের দাবি অত্যন্ত সাহসী এবং তীক্ষ্ণ। তারা একদিকে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে, অন্যদিকে সংস্কার দাবিতে সরব। যদিও আন্দোলনের শুরুর দিকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা পরে প্রত্যাহার করা হয়। এই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি রহস্যময় সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছে। আন্দোলনের অনেক নেতা ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন, যা বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিএনপি ও জামায়াতের ভূমিকা
প্রচলিত বড় দল বিএনপি এবং জামায়াতও এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিএনপি এখন সংস্কারের পরিবর্তে নির্বাচনের দাবিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। অন্যদিকে, জামায়াত সরকারকে নির্বাচনের সময় দিতে প্রস্তুত এবং সংস্কারের দাবি তুলছে। এটি তাদের মধ্যে একটি কৌশলগত অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

বৈশ্বিক প্রভাব ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি
রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানেও প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত তাদের কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যদি রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের উপর চাপ বাড়াতে পারে।

১. ভারত: বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সংবেদনশীল হতে পারে। ভারত তার স্বার্থ রক্ষা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরাসরি হস্তক্ষেপ বা সমঝোতার পথে হাঁটতে পারে।

২. চীন: বাংলাদেশে রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিয়ে চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পগুলো সম্প্রসারণের চেষ্টা করতে পারে।

৩. যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ: গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য চাপ বাড়াতে পারে।

সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো
* বিদেশি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে।

* মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি।

* বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় স্থবিরতা।

উত্তরণের কৌশল
১. সংলাপের উদ্যোগ: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ শুরু করে একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা।

২. আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব: কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো সক্রিয় রেখে বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন আদায় করা।

৩. সংস্কারমূলক উদ্যোগ: প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোর সংস্কার করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।

৪. যুব নেতৃত্বের বিকাশ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মত নতুন শক্তির সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করা।

২০২৫ সালের বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক ধারার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে দেশটি এক নতুন দিগন্তের পথে এগিয়ে যেতে পারে। তবে ভুল সিদ্ধান্ত বা অস্থিরতা দেশকে আরো গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে।

ইউ

News