ফাইল ছবি
আমাদের দেশের জনগণের একটি বড় অংশ মনে করে, যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তারাই সবকিছু করে দেবে। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি নাগরিক দায়িত্ববোধের অভাব এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধক। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি দল বা সরকার যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা।
নাগরিক দায়িত্ব ও সচেতনতা
নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের নিয়ম-নীতি মেনে চলা, কর প্রদান করা, এবং সমাজে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বেশিরভাগ মানুষই ভোট দেওয়ার পরে আর কোনো দায়িত্ব পালন করে না। অথচ রাষ্ট্রের উন্নয়নে নাগরিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
যেমন-
পরিবেশ রক্ষা: নাগরিকদের উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা।
স্থানীয় সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ: নাগরিকরা একত্রিত হয়ে নিজের এলাকাকে উন্নত করতে পারে।
সামাজিক উদ্যোগ: শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
তরুণ প্রজন্ম ও গ্রাজুয়েটদের ভূমিকা
যেখানে শিক্ষিত তরুণরাও সমাজের জন্য কিছু করার আগ্রহ বা দায়বদ্ধতা অনুভব করে না, সেখানে এই প্রবণতা পরিবর্তন করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শুধু পেশাগত দক্ষতা নয়, বরং নৈতিকতা, নেতৃত্ব, এবং দায়িত্বশীলতা শিক্ষা দেওয়া দরকার।
তরুণদের জন্য করণীয় দিক
সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ:
তরুণদের উচিত তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে সমাজের সমস্যাগুলো সমাধানে ভূমিকা রাখা।
স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম:
স্থানীয় পর্যায়ে ছোট উদ্যোগ গ্রহণ করে বৃহত্তর পরিবর্তনের সূচনা করা।
নাগরিক সচেতনতা প্রচার:
অন্যদের মধ্যেও সচেতনতা ছড়ানো এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কাজ করা।
নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা
রাষ্ট্রের উন্নয়ন নির্ভর করে সঠিক নেতৃত্ব এবং সুপরিকল্পিত উদ্যোগের উপর। কিন্তু এই নেতৃত্বে শুধু রাজনৈতিক নেতারাই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষের ভূমিকা থাকা দরকার।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা:
একটি সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা থাকতে হবে, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং পরিবেশের টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
সমাজ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ:
শুধু উন্নয়ন প্রকল্প নয়, নাগরিকদের মধ্যে সামষ্টিক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
ধারাবাহিকতা রক্ষার উপায়
রাষ্ট্রের উন্নয়ন শুধু একটি সরকারের উপর নির্ভরশীল হতে পারে না। এক সরকারের কাজ পরবর্তী সরকারের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ:
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার এবং জনগণের মধ্যে যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।
নাগরিক অধিকার ও দায়িত্বের শিক্ষা:
স্কুল থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ব শেখানো উচিত।
রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক দল, প্রশাসন এবং নাগরিকদের মধ্যে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ এবং রাষ্ট্র সব জায়গায় দায়িত্বশীলতার চর্চা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই প্রজন্মের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর।
ইউ