
ফাইল ছবি
১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন প্রতিটি সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে নানা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। স্বাধীনতার পর প্রথম ঈদ ছিল দেশের জন্য এক নতুন আশা ও আনন্দের মুহূর্ত, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি এবং বিপর্যয়ের পর জাতি পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। দেশ তখন এক অস্থির অবস্থায় ছিল, কিন্তু ঈদ ছিল শান্তি ও পুনর্নির্মাণের উৎসব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন হলেও, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে স্বাধীনতার পর ঈদ উদযাপন বেশিরভাগ সময় ঘরোয়া পরিবেশে সীমাবদ্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ঈদ উদযাপন শেষে, দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির একতা ও শান্তির দিকে নজর দেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয় এবং সামরিক শাসন শুরু হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর, ঈদ উদযাপন ছিল রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণে ব্যবহৃত। জিয়া ঈদ উপলক্ষে কিছু সরকারি অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন, কিন্তু বিদেশি অতিথির উপস্থিতি তখনও খুব কম ছিল। একই সময়, দেশে শোকের পরিবেশ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল, যা ঈদ উদযাপনে ছাপ ফেলেছিল।
১৯৮২ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসেন এবং তার শাসনামলে ঈদ ছিল আরো একটি বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। এরশাদ সরকার ঈদ উদযাপনকে জনগণের মধ্যে সরকারের সাফল্য ও শক্তি প্রদর্শন করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতেন। তিনি ঈদ উপলক্ষে একাধিক সরকারি অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন এবং বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানাতেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রদূতরা ঈদের সময় বাংলাদেশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দৃঢ়ীকরণের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।
১৯৯১ সালের পর, যখন দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া পরপর সরকার পরিচালনা করেন, তখন ঈদ উদযাপন আরো জনমুখী এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। ঈদ ছিল তাদের শাসনকালের একটি বড় সামাজিক অনুষ্ঠান, যেখানে তারা সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঈদ উদযাপন করতেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা তখনও ঈদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন, যা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করত। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি এবং বিদেশি অতিথির শুভেচ্ছা বাংলাদেশের ঈদকে একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান হিসেবে পরিণত করেছিল।
২০০০ সালের পর থেকে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঈদ উদযাপন আরো আধুনিক ও বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। এখন, ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেরও একটি বড় উপলক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঈদ উদযাপন করেন এবং বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এসব প্রোগ্রাম মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, যা ঈদের আনন্দকে আরোপ্রসারিত করে।
বর্তমানে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের ভূমিকা ঈদ উদযাপনকে আরো জাতীয় ঐক্য, শান্তি এবং সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতিনিধিরা প্রতি বছর বাংলাদেশের ঈদ উৎসবে উপস্থিত থাকেন এবং শুভেচ্ছা জানান। এসব আন্তর্জাতিক অতিথির উপস্থিতি ঈদের অনুষ্ঠানগুলোকে একটি বৈশ্বিক মাত্রা দেয়, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে আরও পরিচিত করে।
ইউ