
রাজধানীর বনানীতে পোশাকশ্রমিক নিহতের ঘটনায় শ্রমিকদের বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো।
আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় গাড়িচাপায় নিহত হন পোশাকশ্রমিক মিনারা আক্তার। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরেক শ্রমিক সুমাইয়া আক্তার। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই সহকর্মীরা বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে বনানী, মহাখালী, গুলশান, কাকলি, এয়ারপোর্ট রোড, সাতরাস্তা, ও প্রগতি সরণিসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল থেকে অফিসগামী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজট
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মফিজুল ইসলাম জানান, বনানী এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু গাড়ি ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে এবং কিছু গাড়ি রামপুরা ও প্রগতি সরণি দিয়ে ডাইভারশন করে পাঠানো হচ্ছে।
তবে এতে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বনানী থেকে শুরু হওয়া এই যানজট এখন বিমানবন্দর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সাত রাস্তা ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকাও যানজটে স্থবির। বিকেলের আগে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ইফতারের সময় যানজট আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ট্রাফিক পুলিশ।
যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ
যানজটের কারণে অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। রাস্তায় আটকে পড়া মো. সুমন নামে এক যাত্রী বলেন, উত্তরায় যাব বলে বাসে উঠেছি। কিন্তু জাহাঙ্গীর গেট থেকে গাড়ি সামনে যাচ্ছে না। পরে শুনতে পারলাম বনানীতে রাস্তা অবরোধ। এখন গাড়ির সামনেও যাচ্ছে না পেছনেও যাচ্ছে না, কি একটা অবস্থা। একঘণ্টা ধরে গাড়িতে বসে আছি।
মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জুনাইদ বলেন, বনানীতে রাস্তা অবরোধের কারণে মহাখালীতে চাপ বাড়ছে, যানজট দীর্ঘ হচ্ছে।
এদিকে, শ্রমিকদের দাবি, দোষী চালকের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছে।
যানজটের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কতক্ষণ চলবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে যাত্রীরা বলছেন, এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সমাধান দরকার।
মরদেহ নিয়ে মিছিল করছে শ্রমিকরা
এদিকে দুপুরের পর থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিহত পোশাক শ্রমিকের মরদেহ নিয়ে বনানীতে মিছিল করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করাইল বস্তির লোকজনও। পুলিশ তাদের আশ্বাস দিলেও তারা রাস্তা ছাড়ছে না।
এই বিষয়ে বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল সরকার বলেন, এখন আন্দোলন করছে তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। যাদের অধিকাংশের বাড়ি করাইল বস্তি। এছাড়া কড়াইল বস্তির লোকজন আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তারা কিছুক্ষণ আগে নিহত শ্রমিকের মরদেহ নিয়ে মিছিল করেছেন। মরদেহ এখনো তাদের কাছে রয়েছে। আন্দোলনকারী শ্রমিকদের আমরা বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি তারা এই ঘটনার বিচার পাবে ও এক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করা হবে। সকাল থেকে তাদের আমরা বুঝিয়ে আসছি কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনছেন না। তারা উল্টো পুলিশের প্রতি মার মুখি আচরণ করছেন। আর বনানীতে রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে সারা ঢাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ছে।
টিএইচ