ঢাকা,

০৬ মার্চ ২০২৫


এমন শিক্ষা গুরুর শূণ্যতা এ অঞ্চলের মানুষ কিভাবে পূরণ করবে?

মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম

প্রকাশিত হয়েছে: ১৭:৫৬, ৬ মার্চ ২০২৫

এমন শিক্ষা গুরুর শূণ্যতা এ অঞ্চলের মানুষ কিভাবে পূরণ করবে?

 

শীতের সকালের নরম রোদ, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় দিনে এক আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকল। মাদ্রাসার আঙিনায় সেদিন এক অন্যরকম নীরবতা। সহকর্মীদের চোখে জল, ছাত্রদের মনে এক অপূর্ণতার অনুভূতি— বিদায়ের এই বেদনায় সবাই অভিভূত।

দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে আমাদের আলোকিত শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন (ইসলামিয়া হুজুর) বিদায় নিচ্ছেন। তিনি শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না; ছিলেন আদর্শ, ছিলেন ভালোবাসার প্রতীক। যাঁকে বাবার ছায়াতুল্য হৃদয়ে ধারন করে প্রায় ২১ বছর সাহ্নিধ্য পেয়ে ধন্য হয়েছি।

যিনি 'বিঘা আহমদিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা'র সর্বকালের সেরা ব্যক্তিত্ব বলে মনে করি। এমন এক আধ্যাত্ম গুরুর শুন্যতা এ অঞ্চলের মানুষ কিভাবে পূরণ করবে ?? কলিগ থেকে শুরু করে সাবেক -বর্তমান ছাত্র, স্থানীয় অধিবাসী, বিশেষ করে প্রায় ৩৮ বছরের আবাসস্থল পূর্ব বিঘা গহিরা বাড়ির মানুষের আহাজারী-রোনাজারী বিঘার আকাশ-বাতাস, প্রকৃতি যেনো শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে।

হুজুরের ডুঁকুরে কাঁদা এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি ভালোবাসারই বহি:প্রকাশ। আমি মনে এ ভাবনার স্থান এতোদিন দেইনি, কারণ হুজুরকে কিভাবে বিদায় দেবো ?? এখন তো আর মনকে শান্ত্বনা দিতে পারি না, তাই কলম ধরতে বাধ্য হই। এতো মমতার ভান্ডার, যা থেকে নবীন-প্রবীন কেউ বঞ্চিত হই নি। উনার শাসনকে শিষ্যরা নিয়ামত হিসেবে মেনে নিয়েই মাথার তাজ বানিয়েছেন।

মাওলানা রহুল আমিন একজন দায়ী ইলাল্লাহ ইসলামী হুজুর আমাদের মডেল। আখলাক, চরিত্র, সততা,নেক আমল, যে আদর্শের শিক্ষা পেয়েছি, তা লালন করলে আমাদের জন্য ও জগত এভাবে কাঁদবে। নচেৎ এর বিপরীত ও হতে পারে। হুজুরের জন্য মানূষের এতো আর্তনাদ কেনো?? তা বুঝা একান্ত জরুরী। ভালোবাসা কখনো বল প্রয়োগে পাওয়া যায় না। আচার-ব্যবহার ভালো হলে, আসল কথা তাক্বওয়া পরহেজগার কাউকে উচ্চ আসনে সমাসীন করে। হুজুরকে এখানকার মানুষ হৃদয়ের রাজ সিংহাসনে ঠাঁই দিয়েছেন বলেই এতো আহাজারী।

কর্মের কারণেই মানুষ সম্মানীত বা অপমানিত হয়। শুধু আমাদের ইসলামিয়া হুজুর নন। কয়েক বছর পূর্বে অবসরে গেছেন, প্রবীণ আলেমে দ্বীন জনাব, হযরত মাও: আবুল কাশেম, চাটখিলের হুজুর। হে আল্লাহ হুজুরেরে হায়াতে তাইয়েবা নসীব করুন। তিনি ও এ মাদ্রাসার প্রথম থেকেই খেদমত, অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। *সদ্য অবসরে গেছেন, বরুণচন্দ্র দাশ, প্রবীণ গণিতের শিক্ষক।

যিনি সহজ-সরল মিষ্টিভাষী ছিলেন। *সদ্য অবসরে গেছেন, জনাব বজলুর রশিদ বি, এড। স্যার ও সম্ভ্রান্ত একজন। আল্লাহ তাঁর হায়াতে বরকত দিন।) এ ছাড়া প্রতিষ্ঠতা অধ্যক্ষ, জনাব, মরহুম গোলাম মোস্তফা (রাহে:) সহ যাঁরা অন্ধকার কবরবাসী হয়েছেন, সবার কবরকে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা জান্নাতের বাগান হিসেবে কবুল করেন। মরহুম অধ্যক্ষ হুজুরের জীবনের ভুলগুলো দয়া করে মাফ করে দেন, কায়মনোবাক্যে এ দোয়া করি। চাকরি জীবন থেকে বিদায় নিলেন, কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষা, শৃঙ্খলা, এবং আদর্শ থেকে যাবে চির অমলিন। এই বিদায় কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি। তবে সত্যিকারের শিক্ষক কখনো বিদায় নেন না; তাঁদের শিক্ষা ও স্মৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে চলে। আল্লাহ তাহাদের উত্তম প্রতিদান দিন, নেক হায়াত দান করুন এবং তাঁর সারা জীবনের শ্রম ও নিষ্ঠাকে কবুল করুন। আমিন।

টিএইচ

News