ঢাকা,

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


কুয়েটে নিষিদ্ধই থাকছে রাজনীতি, ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৭:৪৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুয়েটে নিষিদ্ধই থাকছে রাজনীতি, ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) নিষিদ্ধই থাকছে রাজনীতি। একইসাথে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৮তম (জরুরি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ও প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কুয়েটে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ঘোষিত রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের আদেশটি বহাল থাকবে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।

তাছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৩ এর ধারা ৪৪(৫) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। এই আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই ছাড়া রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তদন্তসাপেক্ষে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ও একইসাথে সরাসরি জড়িত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হবে। প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে।

কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. এম. এম. এ. হাসেম, সদস্য শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. আবু জাকির মোর্শেদ ও সদস্যসচিব সহকারী পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের তত্ত্বাবধায়নে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ঘটনায় আহত সকল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণের জন্য আজ বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময় পার হওয়ার পর তারা তালা লাগিয়ে দেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত আমাদের আল্টিমেটাম ছিল। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়নি। তাই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ও বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।

এদিকে পাঁচ দফা দাবিতে আজ সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেন। এই চিকিৎসাকেন্দ্রের দোতলায় চিকিৎসাধীন আছেন ভিসি মুহাম্মদ মাছুদ। মঙ্গলবার রাতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি সেখানে আছেন।

অপরদিকে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। পরে সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা কুয়েটে হামলা ও উসকানিতে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার কুয়েটে ছাত্রদলের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে শিববাড়ি মোড়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

টিএইচ

News