ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা নিয়ে অসন্তোষে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। কলেজের সামনের সড়কে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে।
আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কলেজের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিতরা। দিনভর একমুখী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হওয়ায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে দুপুরে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
সন্ধ্যায় নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসেন উদ্দীন বলেন, তারা চলে যান, পরে আবার সড়কে আসেন। তারা সড়কে আসার পর রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।
এভাবেই চলছে। এর ফলে যানজট তৈরি হয়েছে। আমরা সতর্ক আছি, আমাদের পুলিশ সেখানে আছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে।
কমিটিতে কলেজের বাংলা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পিয়াল হাসানকে আহ্বায়ক এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিল্লাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ রয়েছে।
নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরই বিক্ষোভ শুরু হয়। কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক বলেন, ত্যাগী-বঞ্চিতদের কমিটিতে রাখা হয়নি। ৫ আগস্টের পরে সুবিধাভোগীরা এতে স্থান পেয়েছে। তাই বিক্ষোভ হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক, মিরপুর রোডের একাধিক স্থানে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে পদধারী-পদবঞ্চিত কেউই ককটেল বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেননি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ :
এদিকে, কবি নজরুল সরকারি কলেজে ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। এই সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় কলেজের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে কলেজ ছাত্রদলের পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীরা। বিকালে কয়েকশ ছাত্রদলের কর্মীরা কলেজের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় কলেজের মসজিদের পিছনে ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজে চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা পক্ষপাতিত্ব করেছেন। তাদের দাবি, প্রকৃত ত্যাগী ও যোগ্য কর্মীদের বাদ দিয়ে সুবিধাভোগীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী চায়ের দোকানদার মোহম্মদ রহিম বলেন, দুপুরের দিকে ছাত্রদলের কর্মীরা কলেজের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা কলেজের গেটের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে নানারকম স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে বিকালের দিকে কয়েকশ ছাত্রদলের নেতা-কর্মী জড়ো হয় বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের মতো শব্দ শোনা যায়। তখন স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইরফান আহমেদ ফাহিম জানান, আমরা কিছু জানি না। কে বা কারা ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ করেছে এবং ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। আমরা আহ্বায়ক কমিটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপি পার্টি অফিসে এসেছি।
এই বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, আমি এ বিষয়ে এখনও কিছুই জানি না। খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।
এর আগে গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখার ২৬ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইরফান আহমেদ ফাহিম এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসানকে।
এসব বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির সাংবাদিকদের বলেন, সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে আমরা সবাইকে প্রত্যাশিত পদে দিতে পারছি না। কিন্তু যারা প্রত্যাশিত পদ পাননি তারা যোগ্য নন, এমনটি নয়। পদবঞ্চিত হলে বা যথাযথ মূল্যায়ন না হলে সাংগঠনিক কাঠামো আছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না।
তিনি বলেন, যে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে, তা মাত্র ৪৫ দিনের জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। এই কমিটির দায়িত্ব মূলত ৪৫ দিনের মধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আকার সেশন অনুযায়ী সমন্বয় করেই দ্রুত বাড়ানো হবে।
টিএইচ