চট্টগ্রামে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তার ভক্ত ও অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষের সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
এর আগে চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন বাতিল করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রিজন ভ্যান আটকে দেয় তার সমর্থক ও ভক্তরা। আড়াই ঘণ্টা পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে চিন্ময়ের ভক্ত ও সমর্থকদের সরিয়ে দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে।
রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, অপ ইন্ডিয়াসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে সাইফুল ইসলাম আলিফকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, চিনায় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত এই দাবিটি মিথ্যা এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) প্রেস উইং ফ্যাক্টস।
সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে, আজ চট্টগ্রামে নির্মমভাবে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। দাবিটি মিথ্যা এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জমা দেওয়া ওকালতনামায় দেখা যাচ্ছে, অ্যাডভোকেট সুবাশিশ শর্মা তার আইনজীবী। আমরা সকলকে যেকোনো প্রকার উসকানিমূলক ও মিথ্যা প্রতিবেদন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।
গতকালের সংঘর্ষের খবর দৈনিক কালের কণ্ঠসহ প্রায় সকল গণমাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নেওয়ার পথে লালদীঘি এলাকায় চিন্ময়ের ভক্তরা বিক্ষোভ করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ধাওয়ায় চিন্ময় কৃষ্ণের ভক্ত ও সমর্থকরা ছতভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত প্রাঙ্গণে একটি মসজিদ কমপ্লেক্সে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং নিচতলার একটি কক্ষের কাচ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ছয়টি গাড়ি ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
ভক্তরা এলোপাতাড়ি পাথর ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইসকন সমর্থকরা সাইফুলকে রঙ্গম সিনেমা হল এলাকায় নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আদালতে জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন।’
বাংলাট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘নিহত সাইফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।’
একই তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল ২৪। এতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সমর্থকদের হামলায় চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হয়েছেন।’
তাদের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘অ্যাডভোকেট মোক্তার উদ্দিন সাগর নামে এক আইনজীবী জানান, আমার চোখের সামনে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কোপানো হয়েছে।’
এসব প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, চট্টগ্রামে মঙ্গলবার সংঘর্ষে নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নয় বরং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এবং তিনি পুলিশের গুলিতে মারা যাননি। তাকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী ছিলেন স্বরূপ কান্তি নাথ।
টিএইচ