ছবি সংগৃহীত
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান।
যমুনা নদীর ওপরে বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে একটি ট্রায়াল ট্রেন সেতুর পূর্বপাড় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশ থেকে পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ অংশে পৌঁছায় এবং অপর একটি ট্রেন সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে পূর্বপাড়ে পৌঁছায়।
দুইটি ইঞ্জিন ও তিনটি বগি নিয়ে ট্রায়াল ট্রেন দুইটি চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লিমিটেডের সাব স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম।
তিনি বলেন, সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে পূর্বপাড়ের মধ্যে প্রথমে ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। ধীরে ধীরে এর গতি বাড়ানো হচ্ছে। এইভাবে বুধবার পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই ট্রায়াল কার্যক্রম চলবে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বলে জানিয়ে এ প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষে পরীক্ষামূলকভাবে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। এটি চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণ গতি পেতে আরও দুই মাস সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, সেতুর ওপর বসানো হয়েছে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা বিশেষভাবে তৈরি মরিচা প্রতিরোধক স্টিলের কাঠামোর স্প্যান। এই সেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হয়েছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি।
এ প্রযুক্তিতে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হয়েছে রেল লাইন। এতে সেতুর ওপর রেল লাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে।
গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটতে থাকে শিডিউল বিপর্যয়। এতে বাড়তে থাকে যাত্রী ভোগান্তি।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পরে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে রেল সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন।
দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৬ হাজার ৭৮১ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে চার দশমিক আট কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ করেন।
রেল মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন রেল সেতু চালু হলে ডাবল লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করবে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে।
ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। উত্তরাঞ্চল থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে খরচ। গতিসঞ্চার হবে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে। যা এই অঞ্চলের সামাজিক জীবনযাত্রায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে।
এর পাশাপাশি ট্রান্স এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। এতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রেলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি এবং আমদানি-রপ্তানি খরচ কমবে।
ইউ