ঢাকা,

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪


জনজীবনে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরছে

শুভ্রজিৎ সাহা পিয়াল, নরসিংদী থেকে

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯:১৬, ২৪ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১৯:৫৭, ২৪ জুলাই ২০২৪

জনজীবনে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরছে

ছবি: নরসিংদী কারাগারে আত্মসমর্পণকৃত বন্দিরা...

আগুনের দগ্ধতা, পোড়া গন্ধ আর হামলা দগদগে ঘাঁ পেছনে ফেলে নতুন সাজে সাজছে নরসিংদী জেলা করাগার। ক্ষত ভেদ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে হামলার শিকার নরসিংদী জেলা কারাগার। নিরাপদে বন্দিদের রাখতে নেয়া হচ্ছে সকল উদ্যোগ। কারাগারের প্রধান ফটক মেরামতের পাশাপাশি কারাগারটির ভেতরে বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ সচল করার কাজ শুরু হয়েছে। হামলা ও সংহিংসতা রোধে কারাকর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে নতুন অস্ত্র ও গুলি। কারাগারটির জন্য নতুন জেলার ও জেল সুপারসহ একাধিক করারক্ষী পাদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ২ নারী জঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট।

এদিকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃসংশ হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুটের ঘটনা ২টি মামলা ও সরকারি কাজে বাধা,পুলিশের উপর আক্রমণ, সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৬টি সহ মোট জেলার বিভিন্ন থানায় ৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হামলার সময় কারাগারের দায়িত্বে থাকা জেলার মো. কামরুল ইসলাম বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় ২টি মামলা করেছেন। বিভিন্ন থানার পুলিশ বাদি হয়ে আরো ৬টি মামলা দয়ের করেন।

অন্যদিকে জেলাখানা থেকে লুট হওয়া ৩৬টি অস্ত্র ১১শ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে। চলমান সহিংসতার অভিযোগে জনকে ১০৩জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে বুধবার দিনভর নরসিংদী আইনজীবি সমিতির সভাপতি এড.কাজী নাজমুল ইসলাম  ও সাধারণ সম্পাদক এড.নজরুল ইসলাম রিপনের মাধ্যমে আরো ১৫৬ জন বন্দি আদালতে আত্মসর্মপণ করেছে। নরসিংদী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিচারক রাকিবুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বন্দিরা। এই নিয়ে সর্বমোট ২৮৯ জন বন্দি সেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলো। 

অন্যদিকে সব শঙ্কা উড়িয়ে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরছে জনজীবনে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছে সাধারন মানুষ। খোলা হচ্ছে দোকান পাট। সড়কে চলছে যানবাহন। গেলো শুক্রবার থেকে নরসিংদীতে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক তাণ্ডব হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইটাখলা পুলিশ ফাঁড়ি,পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ি,নরসিংদী জেলা পরিষদ ভবন,মাধবদী পৌরসভা ভবন সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অগ্নিসংযোগ করে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। পুলিশের সরব ভূমিকায় বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করা হয়। ওই সময় জেলা পুলিশ সহ আইন শৃংখ্যলা বাহিনির সদস্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে  সম্মুখ যুদ্ধ করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় গুলি। তাদের প্রতিহত করতে গেরিলা যুদ্ধে অবর্তীন হয় নরসিংদী জেলা পুলিশের সদস্যরা। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে মোসলেহ্ উদ্দিন স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে ফিল্মি স্টাইলে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয় পুলিশ আর বিক্ষোভকারীরা। হাজার হাজার আন্দোলনকারীদের নিভৃত করতে কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ওই হামলা নরসিংদী জেলা পুলিশের বহু সদস্য হতাহত হয়েছে। আহত হয়েছে বিক্ষোভকারীরাও। গেল শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভকারীদের হামলা ও নৈরাজ্যে কমপক্ষে ১৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। তবে বিভিন্ন প্রতক্ষ্যদশীদের ভাষ্য মতে বিক্ষোভকারীদের মৃতের সংখ্যা দ্বিগুন হবে বলে জানিয়েছে গনমাধ্যম কর্মীদের। জেলা পুলিশের সদস্য সহ কমপক্ষে ৩ শতাধিক আহত হয়েছে।

এদিকে নরসিংদী কারাগারে হামলা করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যাওয়ার কিছু ভিডিও এসেছে গনমাধ্যমের হাতে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে,জেলখানার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে অস্ত্র হাতে উল্লাস করছে বিক্ষোভকারীরা। আবার সেই অস্ত্র দিয়েই আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনির সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। একসাথে এত অস্ত্র ও গুলাবারুদ বিক্ষোভকারীদের হাতে চলে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল বিক্ষোকারীরা। তাই বিক্ষোভকারীদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে টিকে থাকতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে হয় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। 

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া নরসিংদী পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারাগারের অস্ত্র লুটের পর বিক্ষোভকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা পুলিশকে মেরে ডিসি অফিস ও এসপি অফিস সহ আদালত পাড়ার দিকে আসতে চেয়েছিল। সরকারি সম্পদ ও মানুষের যানমাল রক্ষায় আমরা পুলিশ সদ্যসরা জীবনবাজি রেখে তাদের সাথে যুদ্ধ করেছি। এতে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।

তিনি অরো বলেন, কারাগারে হামলা,অস্ত্র লুট,পুলিশ এ্যাসল্ট ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে পৃথক ৮টি মামলা হয়েছে।

তারেক/ইউ

News