ঢাকা,

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪


প্রধানমন্ত্রীর বর্ণনায় নাশকতার চিত্র, নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত-শিবির

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৮:০৩, ২৪ জুলাই ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর বর্ণনায় নাশকতার চিত্র, নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত-শিবির

ছবি সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনের নামে সারাদেশে চালানো ভয়াবহ তাণ্ডব ও নাশকতায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করেছে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা।

যারা নাশকতা ও তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তাদেরকে ‘এত সহজে ছাড়া হবে না’ এবং নাশকতাকারীদের ‘দমন‘ করে পরিবেশ উন্নত করা হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

২২ জুলাই (সোমবার) বিকালে নিজ কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামলা-অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এত সহজে ছাড়া হবে না। শক্ত অ্যাকশন নিয়ে এটা দমন করে পরিবেশটা উন্নত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কারফিউ চায় না। রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারপরও সেনা নামাতে হয়েছে। 
তবে ছাত্ররা আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার পরই কারফিউ দিয়ে সেনা নামানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কোটা আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণার পরই ওইদিন থেকে সারাদেশে ব্যাপক নাশকতা হয়। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাটের পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া সাধারণ নাগরিকদের যানবাহনও।

প্রায় দুইদিন ধরে চলে অরাজকতা। বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। সে সময়ের নাশকতা ও তাণ্ডবে সারাদেশে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি করা হয়, তা ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। সেখানে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনে দুবার আগুন দেওয়া হয়। সেখানে ৫০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙচুর; দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোতে হামলা; শনির আখড়ায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ও ভাঙচুর; বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে হামলা ও আগুন; ধানমন্ডির পিটিআইয়ের অফিসে হামলা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও শতাধিক গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো; মহাখালীর ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাবমেরিন কেবল নষ্ট করা হয়েছে। মহাখালী করোনা হাসপাতাল, পুষ্টি ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিআরটিএ ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে সন্ত্রাসীদের বের করে নিয়ে গেছে। কয়েকজন ধরা পড়েছে, কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আফতাবনগর ওয়াসা শোধনাগারে হামলা; বাড্ডা, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেতে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ; রায়পুর পুলিশ কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; রামপুরা থানা পুলিশে অগ্নিসংযোগ; মেরাদিয়া পিবিআই কার্যালয় ভাঙচুর; উত্তরায় রেললাইন উপড়ে ফেলা; মৌচাক পুলিশ বক্স; বসিলায় সিটি হাসপাতালে হামলা; কদমতলী মোহাম্মদপুর থানায় হামলা; বরিশালে র‌্যাবের কার্যালয়ে হামলা; গাড়ির ভেতরে র‌্যাব সদস্যকে হত্যা করা; পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা; গাজীপুরে আওয়ামী লীগের... তাকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে মেরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, হামলায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। ফকিরাপুল পুলিশ বক্স ভাঙচুর; উত্তরা পুলিশের ডিসির কার্যালয় ও টিএসটির আঞ্চলিক অফিস; টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মধুপুর ও কালিহাতি উপজেলার দলের কার্যালয়; গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে আহত করা; জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও ১১টি মোটরসাইকেল পোড়ানো; গাইবান্ধায় রেললাইন উপড়ে ফেলা ও অগ্নি-সংযোগ; বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট; জাসদ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাংস্কৃতিক জোটের কার্যালয়, পুলিশবক্স, সদর ভূমি অফিস, রেল স্টেশন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সদর থানা, সিটি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ভাঙচুর; কোনাবাড়ি থানা এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, কোনাবাড়ি পুলিশ থানা, বাসন থানার চৌরাস্তা পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও আগুন; গাছায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আগুন ২০টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা; ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ। টঙ্গীতে ডেসকোর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ; বেক্সিমকো গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর; টঙ্গী পূর্ব থানায় হামলা; নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অফিসে হামলা; নারায়ণগঞ্জে আগুন দিয়ে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

‘মাদারীপুরে বাস পোড়ানো হয়েছে। সেখানে হামলা করা হয়েছে। কদমতলী ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর; শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, চিটাগাং রোডে সন্ত্রাসী হামলা; সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তরের মহাখালী ও মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের বর্জ্য পরিবহন গাড়িতে হামলা ও আগুন; মোহাম্মদপুর কার্যালয়ে মোটরসাইকেল ও ভবনের ব্যাপক ক্ষতি। কীটনাশক ওষুধ মশা মারার জন্য আমদানি করা হয়েছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। রামপুরা পাম্প হাউজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সব জায়গায় এই অবস্থা। মেট্রোরেলের স্টেশন পুড়িয়ে শেষ।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মীকে হত্যা করেছে। ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাজমুল হোসেন, ৬১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের শোভন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের নূর আলম, আওয়ামী লীগকর্মী রোমানকে হত্যা করা হয়েছে। জুয়েলকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ব্যবসার জন্য যে কাজগুলি করে দিয়েছি তার প্রতিটির ওপর আঘাত করা হয়েছে। আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। সব জ্বলিয়ে পুড়িয়ে শেষ। এটা কোনও ধরনের কথা! এটা কোনও ধরনের আন্দোলন আমি জানি না।’

বিএনপির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল, তারা যদি এভাবে সন্ত্রাস শুরু করে। তার সঙ্গে জঙ্গি-জামাত-শিবির। কাজেই এটা এই জঙ্গিদেরই তো আক্রমণ। না হলে একটা সাধারণ কর্মী তাকে গলা কেটে কলেজে ফেলে রেখে দিল। গলা কাটে কে? হাত কেটে দিয়েছে। পা কেটে দিয়েছে। ছাদের থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ফেলে দিয়ে মেরেছে। এই সমস্ত নৃশংসতা কে করে?

তিনি বলেন, শিবির হচ্ছে সম্পূর্ণ জঙ্গি। জামাতও জঙ্গি। আর আজকে বিএনপি! তাদের চেহারাটাও বেরিয়ে গেছে। এখনও নড়েনি। এখনও হুকুম দেয়, চালিয়ে যাও আন্দোলন। জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের হুকুম দিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বিদেশে গেলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কেমন ছিল আর ১৫ বছরে আমরা বাংলাদেশকে কতটা পরিবর্তন করতে পেরেছি। বিদেশে গেলে একটা সম্মান আপনারা পান।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে দিনরাত পরিশ্রম করি। কিন্তু বার বার একটা আঘাত আসে। ২০১৩, ১৪, ১৫ সেই অগ্নি-সন্ত্রাস। সে কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। হাজার হাজার সম্পদ নষ্ট করেছে। ঠিক এবার আবার দেখলাম অগ্নি-সন্ত্রাস। সেইবার ছিল গাড়ি-ঘোড়া। এবার যে কয়টা স্থাপনা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত এবং ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও ডিজিটাল সিস্টেম করার জন্য করা হয়েছে। সেই জায়গাগুলিতে আঘাত আসলো।’

শেখ হাসিনা বলেন, এখন মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্ল্যান করে তারা এসেছে। জেলায় জেলায় খবর নিয়েছি। সব শিবির কর্মী ঢাকায়। কিন্তু ঢাকা শহরে না। আশেপাশে ঘাপটি মেরে থেকে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিএনপি সম্পূর্ণ মদত দিচ্ছে। আমার প্রশ্ন এটা যে এতকিছু করছে এর অর্থ সরবরাহ কারা করছে? ব্যবসায়ীদের বলবো এই খবরটা আপনারা নেবেন। 

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নানা অপপ্রচার ও গুজবের জবাবে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে! শেখ হাসিনা নাই! শেখ হাসিনা চলে গেছে! কিন্তু শেখ হাসিনা পালায় না। পঁচাত্তরের পর ছয়টি বছর আসতে পারিনি। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছি জীবনে শঙ্কা নিয়ে চলে এসেছি। আমি পরোয়া করিনি। ২০০৭ সালে বাধা উপেক্ষা করে ফিরে এসেছি। আমার স্পেনে যাওয়ার কথা, ব্রাজিলে যাওয়ার কথা, আমি ক্যানসেল করে দিয়েছি যে, আমার দেশের এই ক্রাইসিসে আমি যেতে পারবো না। আমাকে মানুষের পাশে থাকতে হবে।’

আর্মি নামাতে বাধ্য হয়েছি
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য কারফিউ দিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। এখানে সব থেকে সেনসেটিভ হচ্ছে ছাত্র। তাদের যেন কোনও ক্ষতি না হয় সে দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হয়েছে। আমরা পুলিশ লোকবল সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি। জানি না ছাত্রদের সঙ্গে আরও কারা ছিল। আন্দোলনে অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও যেদিন শুরু হলো, তখন আন্দোলনকারী ছাত্র বললো, আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই। এটা আমরা চাই না। তারা (ছাত্ররা) যখন সরে এসেছে, সেই সময় আমি আর্মি নামিয়েছি। আমি কিন্তু তার আগে আর্মি নামাইনি।

তিনি বলেন, আমরা শেষ চেষ্টা করি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে। তারপর আর্মি নামাতে বাধ্য হয়েছি। আর্মি নামিয়েছি। কারফিউ দিয়েছি। এই কারফিউর মধ্যেও তো এরা সন্ত্রাস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এরা কারা! খুব অপরিচিত কেউ নয়। এর সঙ্গে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি যে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল- এই দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যে সাজাপ্রাপ্ত; এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি ওখান থেকে হুকুম দেয়। এটা জ্বালাও, ওটা জ্বালাও। এটা করো ওটা করো। আরও কয়দিন চালাও ইত্যাদি। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, শিবির-যতগুলো ঘটনা ও খুন-খারাপি এরা একসঙ্গে করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এসেছেন এটা আমাদের জন্য ভালো। আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। আপনাদের সমর্থনটা আমাদের দরকার ছিল।এটার ফলে আমরা আরও দ্রুত এই দুর্বৃত্ত- শিবির, জামায়াত, বিএনপির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবো। জঙ্গিদের দমন করা ও ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এখন আরও শক্ত অ্যাকশন নিয়ে এটা দমন করে পরিবেশটা উন্নত করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগুন দিয়ে পোড়ানোর ফলে যে ড্যামেজটা হয়ে গেছে সেগুলি তো মেরামত করতে সময় লাগবেই। আগুন যারা দিল যারা পোড়ালো তাদের বিরুদ্ধে তো আপনাদের কথা বলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের অনেককেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। জেল থেকে এসে আবার ওই একই চেহারা। তবে, এটা অত সহজে ছাড়া হবে না। এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশকে নষ্ট করবে। আর অনবরত বিদেশে আজেবাজে রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আপনাদেরও সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা যেন থাকে, সেটা দেখবেন। দেশের ভাবমূর্তি না থাকলে আপনাদের ব্যবসা এমনিতেই লাটে উঠবে এটা মনে রাখবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা কোটা চায় না। আন্দোলন করেছিল। আমি বাতিল করে দিয়েছি (২০১৮ সালে)। মুক্তিযোদ্ধারা মামলা করেছে। আবার সেটা পুনর্বহাল হয়েছে। এখানে আমার দেওয়া যে প্রজ্ঞাপন সেটা বাতিল হয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করেছি। কোর্টে যখন আছে, বিচার হবে। আমি বলেছিলাম কোর্ট ফয়সালা দেবে। বলেছিলাম, তাতে কেউ হতাশ হবেন না। আমাদের তরফ থেকে বার বার কথা বলেছি। তাদের বুঝিয়েছি। ন্যাশনকে অ্যাড্রেস করে বলেছি। তারপরও আন্দোলনকে চালিয়ে যাওয়া!

‘আপিল বিভাগ সময় দিয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধরাটা তো উচিত ছিল। তারপরও তাদের কী সিজ। সারা বাংলাদেশ অচল করে রাখা। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। এতে কী ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হয়নি? সেখানে যারা সাপোর্ট দিয়েছেন। জানি না, সেখানে আপনাদের (ব্যবসায়ী) অনেক আপন লোকজন ছিল। অনেক স্কুলকলেজ। সবাই সাপোর্ট দিয়েছে। সবাই মিলে সেই সময় ছাত্রদের একটু বিরত করতো।’

আন্দোলনকারীদের দাবি মেনেছি
শেখ হাসিনা বলেন, যে ক্ষতিগুলো হয়েছে। কারা করলো এটা কোনও রাখঢাক ব্যাপার না। এখানে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ছাত্রদের বিরুদ্ধে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমাল শুরু হয়েছে, আমি ছাত্রলীগকে বলেছি, তোমরা বের হয়ে চলে আসো। বেচারা বেরিয়ে চলে এসেছে; আর তাদের প্রত্যেকের রুম থেকে সমস্ত মালামাল ফেলে দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মেরেছে। আমি বলেছি কোনোকিছু করবে না। ধৈর্য ধরো।

‘শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে। ছাত্রলীগ করে কেন এ জন্য মেয়েদের পিলারের সঙ্গে বেঁধে মেরেছে। কত ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেগুলি বলতে চাই না। তারপরও আন্দোলনকারীর কথা ধৈর্য সহকারে শুনেছি। যখন যে দাবি করেছে, তা মেনেছি। মানার পরেও তারা কী করবে জানি না। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবসার করে কারা পিছনে এই ঘটনা ঘটালো?’

ব্যবসায় কখনও আমরা হাত দেইনি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো ব্যবসায়ীদের ভাগ করি না। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি আমি তো এভাবে দেখি না। আমার থেকে কেউ এমন আচরণ এখনও কেউ পাননি। কিন্তু আমি কি চিনি না? চিনি তো সবাইকে। এ দেশের বয়স্ক রাজনীতিবিদ কিন্তু আমি। আমি চিনি সবাইকে। কার কী মত-পথ, তা আমি জানি। কিন্তু আমি দেশটাকে ভালোবাসি। যারা আমার দল করেন না। আমাদের হয়তো ভোটও দেয় না। তারাও কিন্তু ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

‘ব্যবসায় কখনও আমরা হাত দেইনি। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে দিয়েছি। তাদের উৎসাহিত করেছি। সুযোগ দিয়েছি। সুযোগ দেওয়ার সময় দল বিবেচনা করিনি। আমি ব্যবসা করি না। ব্যবসার সঙ্গেও আমি নেই। আমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। আমার আমলে যারা ব্যবসা পেয়েছে তারা নির্বিঘ্নে পেয়েছে। হাওয়া ভবনের খাওয়া দিতে হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বেসরকারি খাত আমি উন্মুক্ত করেছি। সব থেকে বেশি সুযোগ ব্যবসায়ীদের দিয়েছি। কোভিডের সময় সব ধরনের সহযোগিতা আপনাদের করেছি। শ্রমিকদের বেতনটা পর্যন্ত সেই সময়ে আমরা দিয়ে দিয়েছি।’

ইউ

News