ঢাকা,

৩০ অক্টোবর ২০২৪


পদ্মায় অবৈধ ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ ২ পুলিশ

সুকুমার সরকার

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

পদ্মায় অবৈধ ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ ২ পুলিশ

ফাইল ছবি

ইলিশ রক্ষায় বাংলাদেশে ২২ দিন শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় পদ্মাসহ বাংলাদেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহণ বন্ধ। কিন্তু কড়া নজরদারির মধ্যেও কিছু অসাধু মৎস্যজীবী বসে নেই। লুকিয়ে-চুরিয়ে ইলিশ শিকার করছে। বাঁধা দিতে গিয়ে অপেশাদার ইলিশ শিকারিদের হামলার মুখে পড়ছেন মৎস্য বিভাগসহ পুলিশ সদস্যরা।

দেশের পশ্চিমের জেলা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত শিলাইদহ সংলগ্ন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারে বাঁধা দিতে গিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্যের ওপর মৎস্যজীবীরা হামলা চালিয়েছে। 

সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই পুলিশ সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে পুলিশের একাধিক দল নৌকা নিয়ে পদ্মায় তল্লাশি চালাচ্ছে। নিখোঁজ দুই পুলিশ সদস্য হলেন- এএসআই সদরুল আলম ও এএসআই মুকুল হোসেন।  সোমবার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার বেড় কালোয়া এলাকার পদ্মা নদীতে এ  কাণ্ড  ঘটে। এ ছাড়া হামলায় দুই ইউপি সদস্য আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চললেও পদ্মা নদীতে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে মাছ শিকার চলছে। 

অপরদিকে দক্ষিণের জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে মা-ইলিশ রক্ষা অভিযানে গিয়ে মৎস্যজীবীদের হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য আধিকারীক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় শাকিল নামের এক মৎস্যজীবীকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার আটক মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ২৭ অক্টোবর (রবিবার) বিকালে বোরহানউদ্দিন উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদি হাসানের নেতৃত্বে উপজেলা মৎস্য অফিসার মনোজ কুমার সাহা ও বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের তিন সদস্যসহ ৭-৮ জনের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযান যায়। এ সময় মৎস্যজীবীরা অভিযানিক দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ বৈঠা ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মৎস্যজীবীদের বৈঠার আঘাতে বোরহানউদ্দিন থানার এএসআই মো. হেলাল ও একজন পুলিশ কনস্টেবল জখম  হন। হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ কাণ্ডে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বাদী হয়ে আটক শাকিলসহ ২৫ জনের নামে বোরহানউদ্দিন থানায় মামলা করেন। তাদের  অভিযানের সময় দুইটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে ২০-২৫ জন মৎস্যজীবীকে নদীতে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। মৎস্যজীবীদের আটক করতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। এ সময় বোরহানউদ্দিন থানার এএসআই মো. হেলাল কাঁধে বৈঠার আঘাতপ্রাপ্ত হন ও একজন কনস্টেবলের আঙুল ফেটে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে দুইটি মাছ ধরার ট্রলারসহ এক মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়। তবে অন্য মৎস্যজীবীরা পালিয়ে যায়। এরআগে ভোলা জেলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ২৮ মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়। রাজবাড়ী জেলায়ও  ইলিশ মাছ ধরার অপরাধে চার মৎস্যজীবীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে।   

প্রশাসনের কড়া নজরদারি সত্বেও পদ্মা-মেঘনা নদী সংলগ্ন জেলাগুলোতে থেমে নেই ইলিশ শিকার। নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের দায়ে অপরাধীদের জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডও ভোগ করতে হচ্ছে। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার  রাজবাড়ি জেলায় পদ্মা নদীর নিষিদ্ধ অংশ রয়েছে ৪২ কিলোমিটার। রাজবাড়ির সদর উপজেলা ও গোয়ালন্দ উপজেলার চরে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। গ্রাহকের কাছে সেগুলো পৌঁছানো হচ্ছে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে। সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুড়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী এলাকায় চলছে ইলিশ বেচাকেনা। বিশেষ ক্ষেত্রে রাজবাড়ি শহরে এনে চোরাই ইলিশ হোম ডেলিভারিও দিচ্ছেন অসাধু মৎস্যজীবী ও তাঁদের লোকেরা। পদ্মা থেকে ইলিশ ধরে নদীর তীরে এনেই বিক্রি করা হচ্ছে। ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশগুলো ১ হাজার ৫০০ টাকা ও খোকা (জাটকা) ইলিশ ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে তারা।

ইউ

News