ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে যিনি ‘ডিভাইন রাসেল’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। তিনি দেশের প্রথম সারির সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিভাইন আইটি লিমিটেড ও বাংলাদেশের প্রথম ওয়েববেইজড ইআরপি - প্রিজম ইআরপি এর প্রতিষ্ঠাতা ।
ইকবাল আহমেদ একজন কম্পিউটার সায়েন্স গ্রাজুয়েট। ১৯৯৬ সালে পড়াশোনার শুরু থেকেই নিত্য নতুন টেকনোলজির সাথে পরিচয় ও ব্যবহারের পাশাপাশি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, ইন্টারনেট সার্ভিস এবং কনসাল্টিং ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন এবং দেশের বড় বড় সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সফলতার সাথে নিজস্ব সফটওয়্যার দিয়ে অটোমেশন করেছেন।
প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডিভাইন আইটি উন্নত প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন এর মাধ্যমে কাস্টমার সন্তুষ্টি ও সফলতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। 'প্রিজম ইআরপি' ডিভাইন আইটি লিমিটেডের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট। ডিভাইন আইটি লিমিটেড সিএমএমআই ও আইএসও সনদ প্রাপ্ত একটি সফটওয়্যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
ডিভাইন আইটি লিমিটেড তার অভাবনীয় সাফল্যের পাশাপাশি আইটি খাতে অবদানের জন্যে বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অ্যাওয়ার্ডস ২০১৫, ২০১৮ এবং এপিকটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডস ২০১৭ ও উইটসা অ্যাওয়ার্ডস ২০২০, ডেইলি স্টার আইসিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ ‘আইসিটি সলিউশন প্রোভাইডার অব দ্য ইয়ার (লোকাল মার্কেট)’ পুরস্কার।
দেশীয় বৃহৎ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি হিসেবে ডিভাইন আইটি’কে বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ‘প্রাইভেট সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ এর মর্যাদা দিয়েছে। ২০০৫ সাল থেকেই দেশে ও দেশের বাইরে এই কোম্পানিটি সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির মোট ৫টি অফিস রয়েছে, যা সব মিলিয়ে ২০ হাজার বর্গফুট এর বেশি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৬০০ জনেরও বেশি জনবল কাজ করছে। কপিরাইট প্রোডাক্ট ৯টি ও ট্রেডমার্ক প্রোডাক্ট ৬টিসহ বর্তমানে ২৬টি সেবা চালু রয়েছে।
ডিভাইন আইটির প্রিজম ইআরপি বাংলাদেশের প্রথম ইআরপি সফটওয়্যার যা ৩৫ টিরও বেশি ধরনের ব্যবসাখাতকে ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের ৫০০ এরও অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার দৈনন্দিন ব্যবসা পরিচালনার জন্যে প্রিজম ইআরপি সলিউশন ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক ইআরপি সলিউশনের প্রতিযোগিতায় প্রিজম ইআরপি দেশি ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।
কোনরকম পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একদম নিজ উদ্যোগে ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে সুদীর্ঘ প্রায় ২০ বছরের আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন আর নানা চ্যালেঞ্জের সমাধান করে নিজের কোম্পানিকে একটা শক্ত ভিত এর উপর দাড় করিয়েছেন।
দেশের সফটওয়্যার খাতের এসোসিয়েশন বেসিস এর আসন্ন নির্বাচনে (২০২৪-২৬) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান প্রার্থী হয়েছেন।
ইকবাল আহমেদ বলেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনাকে সিস্টেমেটিক, প্রসেস ড্রিভেন করার কারনে আমার ইন্ড্রাস্ট্রিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করার সময় ও সুযোগ আছে বিধায় এবার আমি বেসিস নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সফটওয়্যার ও আইটি উদ্যোক্তা হিসাবে যে সব সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে সেই গুলো আমাদের ইণ্ড্রাস্ট্রির খুব কমন সমস্যা বলে আমার মনে হয়। এই সম্যসা গুলো আমি আমার কোম্পানির অর্থ, সময় আর ট্রায়াল এণ্ড এরোর মধ্যে দিয়ে সমাধান তৈরি করেছি। আমার বিশ্বাস এই সমাধান গুলোই আমাদের ইণ্ড্রাস্ট্রির অন্য মেম্বারদেরও প্রয়োজন। এই সমাধান গুলো আমাদের মেম্বারদের অর্থ, সময় বাঁচিয়ে দিতে পারবে একইসাথে ব্যর্থতাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম করে তুলবে। সেই প্রত্যাশা আর প্রত্যয় নিয়ে আমি এবারের বেসিস ইলেকশনে অংশগ্রহণ করছি।
এখানে বলে রাখতে চাই এই ইণ্ড্রাস্ট্রিটি আমি জানি, চিনি। ইণ্ড্রাস্ট্রির অনেককে চিনি যাদের সাথে নিয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জটিল এই সমস্যাগুলোর প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও উদ্যোগ আমি নিতে সক্ষম হবো।
আমি বেসিসে কনট্রিবিউট করেছি আমার সফটওয়্যার এন্ট্রেপ্রনিয়র হিসাবে যাত্রার শুরু থেকেই। পূর্ববর্তী সময়ে বেসিস এর বিভিন্ন কমিটি ও সাব কমিটি তথা এক্সেস টু ফাইন্যান্স, এইচআর ডেভলপমেন্ট, কমিউনিকেশন সলিউশন, লোকাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ও অ্যাডভাইজারি স্ট্যান্ডিং কমিটি মেম্বার হিসাবে বেসিস ও ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করেছি।
ফখরুল হাসান বলেন,বেসিসের বাইরেও আমার বন্ধু মহলে যারা আইটি বিজনেস এর সাথে যুক্ত আছেন তাদের জন্য আমি সর্বদা সাসটেইনেবল আইটি বিজনেস, কোম্পানি ইনফ্রাস্ট্রাকচার, লং-টাইম বিজনেস প্ল্যানিং, কমপ্লায়েন্স, ব্যাংক ইনভেসমেন্ট এবং সফটওয়্যারকে অডিটেড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিতে রূপান্তর করা নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছি।
দেশের বাজারকে দেশীয় সফটওয়্যার দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে লোকাল কোম্পানিগুলোর পার্টনারশিপে আমি নিয়মিতভাবে জোর দেই। আমাদের এই যৌথ উদ্যোগের ফলাফল স্বরূপ আমাদের দেশ প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় থেকে অব্যাহতি পায়।
চলমান সমস্যা বা ট্রেন্ডিং টেকনোলজি দুটোতেই আমার অংশগ্রহণ সবসময়ই অগ্রভাগে থাকে । আমার সর্বান্তকরন প্রচেষ্টা ও লক্ষ্য হলো দেশকে সফটওয়্যার খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা এবং সফটওয়্যার খাতে দেশীয় বাজারে ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় থেকে রক্ষা করা। কোম্পানি গুলো ক্যাপাসিটি বাড়াতে সক্ষম হলেই দেশকে "স্মার্ট বাংলাদেশ" রূপান্তরে করা সম্ভব হবে।
ইকবাল আহমেদ আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে সফটওয়্যার উৎপাদন পর্যায়ে ও ‘কাস্টমাইজেশন’ সেবার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে যা নিয়ে আমরা এবছরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)এর সাথে কথা বলছি যাতে ভ্যাট না থাকে এবং সেবা খাতে যে কর অব্যাহতি পাচ্ছি তাও আমরা ২০৩১ সাল পর্যন্ত চাই। এই লক্ষে কাজ করার ইচ্ছা ও যথাযথ পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে সেবা রপ্তানিতে যে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ সুবিধা বিদ্যমান তাও আমরা চলমান রাখতে সচেষ্ট থাকবো। তাছাড়া অনেক বেসিস প্রতিষ্ঠানগুলো দেখা যায় ভ্যাট ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সে পিছিয়ে আছে যার ফলে নানারকম প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়।আমি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবো।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডাসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও নতুন নতুন দেশে রপ্তানি ডেস্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইকবাল আহমেদ বলেন, বেসিস এর সেক্রেটারিয়েট এখনো অনেক দুর্বল, বেসিস এর যেহেতু নিজস্ব কোন জায়গা নেই তাই অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা রয়েছে।আমার উদ্যোগ থাকবে ২০২৬ সালের মধ্যে বেসিসের নিজস্ব একটি স্থাপনা করা যেখানে আমরা বিআইটিএম এর প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করতে পারবো।
দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা আইটি গ্রাজুয়েট তৈরি করছে,সরকারের আইসিটি ডিভিশনও অনেক আইটি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। এবার আমার লক্ষ্য হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি কোলাবরেশনে বেসিস এর বিআইটিএম'কে একটি পূর্ণাঙ্গ আইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করা।
পরিশেষে দেশের তথ্য ও প্রযুক্তির খাতকে অগ্রসর করে, বেসিস এর কল্যানার্থে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে মূল লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইকবাল আহমেদ সকলের দোয়া ও সফল সমর্থন কামনা করছেন।