
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবাহানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অফিস সহকারী(ক্যাশিয়ার) মো. ফরিদ খান ওই পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। এ বিষয়ে ভূঞাপুর ও টাঙ্গাইলের চার ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দুর্নীতিদমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগকারীরা হচ্ছেন, ভূঞাপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমীর হামজা তালুকদারের ছেলে মো. শামীম হোসেন তালুকদার, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ইব্রাহীম শেখের ছেলে মো. তুহীন শেখ, টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মোছা. জাহানারা বেগম প্রমুখ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবাহান ও একই পদের তৎপূর্ববর্তী কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী(হাসপাতালের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত) মো. ফরিদ খান নানা সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী(ক্যাশিয়ার) মো. ফরিদ খানের মাসিক বেতন ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা। অনিয়ম-দুর্নীতি করে তিনি প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অফিস সহকারী হয়েও তিনি নিজেকে হাসপাতালের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তার যোগসাজসে তিনি চিকিৎসকদের আবাসন বরাদ্দ থেকে কমিশন, রেপুটেশনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন উত্তোলনে উৎকোচ গ্রহণ, রোগীদের খাবার, মেডিকেল পরীক্ষা ও টেন্ডার থেকে কমিশন নিয়ে থাকেন।
এছাড়া হাসপাতালের নিয়োগ বাণিজ্য ও হাসপাতালের মসজিদে অনুদানের টাকাও আত্মসাত করেছেন। এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি প্রায় পাঁচ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভুত উপার্জিত টাকা দিয়ে নিজের ও স্ত্রী এবং নিকটাত্মীয়দের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন।
অবৈধ উপার্জনে দৃশ্যমান স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ভূঞাপুরের ঘাটান্দির মডার্ণ টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট, ভূঞাপুর শহরের টাইমস প্যালেসে ৪৫ লাখ টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগে একটি ফ্ল্যাট। টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়ায় স্বপ্নচূড়ায় দুইটি ফ্ল্যাট, একই শহরের বটতলায় সুন্দরবন টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট- এখানে প্রাথমিক বিনিয়োগ ৬০ লাখ টাকা। ভূঞাপুরের ফসলকান্দিতে ৫ শতাংশ ভূমি এবং নিকরাইলে ৫০ লাখের বেশি টাকায় ৩ শতাংশ ভূমি ক্রয় করেছেন। রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের ১৩ নম্বর সেক্টরে শ^শুরবাড়ির আত্মীয়ের নামে এক কোটি ২০ লাখ টাকায় অভিজাত ফ্ল্যাট কিনেছেন। এক কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যে এলাকায় স্ত্রীর নামে স্থাবর সম্পত্তি(জমি) কিনেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় অফিস সহকারী মো. ফরিদ খান নিজের ও তার স্ত্রীর নামে নগদ ৫৫ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহকারী মো. ফরিদ খানের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে না পেয়ে সরেজমিনে হাসপাতালে উপস্থিত হলে তিনি পরিচয় জানতে পেরে অফিস থেকে চলে যান।
অভিযোগ দাখিলকারীদের পক্ষে মোছা. জাহানারা বেগম জানান, তারা জেনে-শুনে-বুঝে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে অপকর্মের প্রতিকার পেতে গত ২৪ এপ্রিল প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে দুদকে অভিযোগ দাখিল করেছেন। একজন অফিস সহকারী কীভাবে পাঁচ কোটি টাকার মালিক হন- জনগনের তা জানার অধিকার আছে। উল্লেখিত বিষয়াদি সরেজমিনে তদন্ত করে দুদক আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এটাই তারা আশা করেন।
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা(টিএইচও) ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবাহান জানান, তাঁর মনে হয়না মো. ফরিদ খান কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। তবে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে- কমিটির রিপোর্ট পেলে সবই জানা যাবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. ফরাজী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম মঞ্জু জানান, তিনি ছুটিতে রয়েছেন এবং ঢাকায় অবস্থান করছেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত নন। অফিসে যোগদান করে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।
টিএইচ