ছবি সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই বছর পর শনিবার দেশটিতে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোট গণনা শুরুর পরপরই জানা যায়, ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের (এনপিপি) নেতা অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে দেশটির নবম প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। লঙ্কা বিজয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেন এ বামপন্থী নেতা।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় দফায় গড়ালো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ভোট গণনায় অনুড়া কুমারা দিশানায়েকে এগিয়ে থাকলেও তিনি কাঙ্ক্ষিত ভোট পাননি। বিজয়ী হতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে। কিন্তু এ বামপন্থী নেতা পেয়েছেন ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ ভোট।
দিশানায়েকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমদাসা ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
অন্যদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে পেয়েছেন ১৭ শতাংশ ভোট। ফলে এ নির্বাচনের পর বিক্রমাসিংহে আর ক্ষমতায় থাকছেন না তা প্রায় নিশ্চিত।
দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দিশানায়েকে এবং প্রেমদাসা, এই দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখনও দ্বিতীয় দফার ভোটের তারিখ ঘোষণা করেনি কমিশন।
এর আগে প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে ছিলেন দিসানায়েকে। তিনিই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন এমন দাবি করে তার দল এনপিপি জানায়, চূড়ান্ত ফলাফলে জয়ী ঘোষণা করা হলে রোববারই শপথ গ্রহণ করতে পারেন দিশানায়েকে। এর পরপরই শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা দিসানায়েকেকে অভিনন্দন জানান।
কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রেমদাসা ধীরে ধীরে ব্যবধান কমিয়ে আনেন। ঐতিহাসিক এ পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রেমদাসা আরও শক্তি নিয়ে ফিরে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯৮২ সালের পর শ্রীলঙ্কায় আটটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটিতেই প্রথম দফাতেই বিজয়ী নির্ধারিত হয়েছে। এবারই প্রথম দ্বিতীয় দফায় গড়ালো নির্বাচন।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার পর একজন প্রার্থী মারা যান।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন আইন অনুযায়ী, দেশটিতে একজন ভোটার মোট তিন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কোনো একজন প্রার্থী কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে তাকেই বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
তবে কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট হবে।
এর আগে অর্থনৈতিক মন্দার জেরে ২০২২ সালে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে একই বছরের মে মাসে হাজার হাজার মানুষ সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন গোতাবায়া।
পরে ক্ষমতায় বসেন রনিল বিক্রমাসিংহে। পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান। গেলো দুই বছরে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে।
২০২২ সালে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর অর্থাৎ দেউলিয়া হওয়ার পর এখনও শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ শুরু করেনি। দেশটির ওপর এখনও চার হাজার ৬০০ কোটি ডলার বা ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ রয়েছে।
অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটা কেটে গেলেও শ্রীলঙ্কায় বেঁচে থাকতে এখনও লাখ লাখ মানুষ রীতিমতো সংগ্রাম করছে।
ইউ