ঢাকা,

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪


বৈঠকে চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিলেন মমতা

বিজনেস আই ডেস্ক

প্রকাশিত হয়েছে: ১৭:৪৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈঠকে চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিলেন মমতা

ছবি সংগৃহীত

প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকে জুনিয়র চিকিৎসকদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই একথা জানান।

মমতা বলেন, চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে মঙ্গলবারই সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকদের দাবি মেনে নিয়ে রাজ্যের শীর্ষ দুই স্বাস্থ্যকর্তাকেও অপসারণ করা হচ্ছে। তিন জনকেই অন্য পদে দায়িত্ব দেয়া হবে।

তবে, এখনো ‘ধর্ণা আন্দোলন’ চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, দাবি মেনে নেয়া হলে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা সরে যাবেন না।

অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককে ৯৯ শতাংশ সফল বলে দাবি করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের মতে, কিছু বিষয়ে উভয়পক্ষ সহমত হলেও, অল্প কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কাজেই এই বৈঠককে শতভাগ সফল বলা যাবে না।

১৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দিনগত রাত ১২টায় কালীঘাটে নিজ বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের পাঁচ দাবির মধ্যে তিনটিই মেনে নেয়া হচ্ছে।

চিকিৎসকদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তকে বর্তমান সিপিকে অসম্মান করে নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার দায়িত্ব নেবেন। একইসঙ্গে পুলিশের একাধিক পদেও রদবদল করা হবে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে সরিয়ে দেয়ার দাবি মেনে নেয়া হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বুধবার বিকালে কলকাতা পুলিশে বদল আনা হবে। প্রত্যেকে যাতে নিরাপত্তা পায়, সে বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। নিরাপত্তার দায়বদ্ধতা সবার। সমস্ত হাসপাতালের সিসিটিভি, রেস্টরুমসহ বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

মমতা বলেন, পুলিশ আমাদের ফোর্স। তারা সারাক্ষণ আমাদের জন্য কাজ করে। তাদের দিকটাও আমাদের দেখা উচিত।

এদিন সিপি’র পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিনীত গোয়েল আগেই পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, তার প্রতি চিকিৎসকরা আস্থা রাখতে পারছেন না। বিনীত বলেছিলেন তারও পরিবার-পরিজন আছে। পরে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। নতুন সিপিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন বিনীত গোয়েল।

সামগ্রিকভাবে বৈঠক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উভয় পক্ষই খুশি। আলোচনার সময় তারা অনেক ইস্যু তুলে ধরেছেন। ওদের বক্তব্য আমরা রাখতে দিয়েছি। বড়দের সৌজন্য বেশি করতে হয়। আমি মনে করি মিটিংটা পজিটিভ হয়েছে। না-হলে ওরাই বা সই করবেন কেনো? আমরাই বা সই করবো কেনো! ওরা ছোট বলে ওদের দাবি একটু বেশিই মেনেছি।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে এমনিতেই বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে আপনারা কর্মবিরতি ছেড়ে কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের চার দাবির মধ্যে তিনটিই মেনে নিয়েছি। তাছাড়াও সিসিটিভি, লাইট, রেস্টরুম, ওয়াশরুম তৈরি করার ব্যাপারে ১০০ কোটি টাকা দেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটির বিষয় দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আমাদের যতদূর সম্ভব করবো। দায়বদ্ধতা সকলেরই থাকে।

মমতা বন্দ্যোপাাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই বৈঠক আংশিক সফল। কয়েকটি জিনিস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে অনেক বিষয় নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও সেগুলো নিয়ে আগামীতে আলোচনার রাস্তা খোলা থাকছে। দীর্ঘ বৈঠকের পর একাধিক দাবি মেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার নির্দেশ কার্যকর না-হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। সেইসঙ্গে, অবস্থান বিক্ষোভও চলবে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে।

আরজি কর হাসপাতালে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে গত ৩৮ দিন ধরে আন্দোলন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্যের একাধিক হাসপাতালে চলছে কর্মবিরতি। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৫ দফা দাবি নিয়ে শেষ সাত দিন ধরে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সাথে বার বার আলোচনার চেষ্টাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। 

মমতার পক্ষ থেকে একের পর এক ই-মেইল করেও ভেস্তে যায় দুই পক্ষের বৈঠক। পরে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি যান আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। দুই পক্ষের মধ্যে চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক। এরপর আনন্দে মেতে ওঠেন চিকিৎসকরা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তারা জানান, আন্দোলনের বড় জয় হয়েছে। তবে আন্দোলন চলবে।

চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ বলেন, সরকার আমাদের দাবিগুলো মানতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে এখনও কোনও অর্ডার কপি হাতে পাওয়া যায়নি। সুতরাং অর্ডার কপি না-পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। সেই দিকেও নজর থাকবে আমাদের।

চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো বলেন, ডিসি নর্থের প্রসঙ্গ যখন উঠে আসে খুব লজ্জাজনকভাবে উনি মাথা নত করতে বাধ্য হন। সন্দীপ ঘোষ কে? তার এতো বাড়বাড়ন্ত কেনো? কার নির্দেশে ওইদিন ঘর ভাঙা হয়েছিলো? স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা দুই জনকে সরিয়ে দেয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। কিন্তু কেনো স্বাস্থ্য সচিবকে সরানো হবে না? সে প্রশ্নও আমরা তুলেছি।

ইউ

News