ঢাকা,

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪


ভ্যানে লাশের স্তূপের ভাইরাল সেই ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২০:৩৪, ৩১ আগস্ট ২০২৪

ভ্যানে লাশের স্তূপের ভাইরাল সেই ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল

ছবি সংগৃহীত

ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে এক দল পুলিশ। এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। রোমহর্ষক এ ভিডিও ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত কয়েকজন ব্যক্তির। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাটি কোথায় ঘটেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। 

ভিডিওতে দেখা গেছে, মাথায় পুলিশের হেলমেট। সাদাপোশাকের ওপর পুলিশের ভেস্ট পরা এক ব্যক্তি আরেকজনের সহায়তায় নিথর এক যুবকের দুই হাত ধরে ভ্যানের ওপর তুলছেন। এরই মধ্যে ওই ভ্যানের ওপর আরো কয়েকটি নিথর দেহ স্তূপ করে রাখা রয়েছে। দেহগুলো থেকে রক্ত ঝরে পড়ে সড়কের কিছু অংশ ভিজে গেছে। বিছানার চাদর সদৃশ একটি চাদর দিয়ে তাদের ঢেকে রাখা হয়েছে। পাশেই হেলমেট মাথায় পুলিশের ভেস্ট পরা আরো কয়েকজনকে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি সাভারের আশুলিয়া থানা-সংলগ্ন এলাকার বলে অনেকে দাবি করেছেন। এএফপির ফ্যাক্ট-চেকিং এডিটর কদর উদ্দিন শিশির তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে ভিডিওটে শেয়ার করে এটি ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার নিকটবর্তী এলাকায় বলে উল্লেখ করেছেন।

সরেজমিনে ভিডিওটির আশপাশের নানা বিষয় পর্যালোচনা করে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে স্থানটি আশুলিয়া থানা ঘেঁষা ‘ইসলাম পলিমারস অ্যান্ড প্লাস্টিসাইজারস লি. অফিসার ফ্যামিলি কোয়ার্টারের’ পাশের সড়ক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঘটনাস্থল হিসেবে দাবি করা স্থানটি থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুটের দূরত্বে ‘সাদিয়া রাজশাহী কনফেকশনারি অ্যান্ড মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামে একটি দোকান আছে। দোকানের মালিক ফাহিমাকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখানো হলে তিনি স্থানটি নিশ্চিত করেন। ফাহিমা বলেন, ‘হ্যা, এটাই ওই জায়গা। বালুর বস্তা পালা দিয়ে ব্যারিকেড বানিয়ে ছিল।’

ভিডিওটিতে আরো দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের পাশের ‘ইসলাম পলিমারস অ্যান্ড প্লাস্টিসাইজারস লি. অফিসার ফ্যামিলি কোয়ার্টার’-এর দেয়ালে নির্বাচনী পোস্টার সাঁটানো আছে। দেয়ালের ভেতরের অংশের একটি গাছের পাতা এসে পড়েছে সড়কের দিকে। দেয়ালের একটি অংশে কিছুটা বাঁক আছে। দেয়ালের নিচের দিকে কিছু অংশ কালো।

স্থানীয়রা বলছে, ভিডিওটি ঘটনাস্থলের পাশেই একটি তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে বাড়ির একাধিক ভাড়াটে ও মালিকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা ভিডিওর ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।

ভিডিওতে হেলমেট হাত ও পুলিশের ভেস্ট পরা ব্যক্তি ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলে দাবি করছেন অনেকে। এ বিষয়ে কথা বলতে ওই কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নির্বিচার গুলি চালালে বেশ কয়েকজন নিহত হন। আহত হন অনেকে। রাতে আশুলিয়া থানার অদূরে নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়কের এক পাশে পুলিশ লেখা পিকআপের আগুনে ভস্মীভূত অন্তত দুটি মরদেহ দেখতে পান তারা। এ ছাড়া থানার সামনে আগুনে পোড়া একটি মৃতদেহ ছিল। পদচারী–সেতুতে উল্টো করে ঝোলানো ছিল ক্ষতবিক্ষত দুই পুলিশ সদস্যের লাশ। তখন স্থানীয়রা আগুনে ভস্মীভূত একাধিক লাশ পিকআপে থাকতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন। ওই রাতে আশুলিয়া থানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

পরদিন পুলিশ লেখা পিকআপে আগুনে পুড়ে যাওয়া একজনকে শনাক্ত করেছিলেন বলে স্বজনেরা জানান। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনের মা শাহিনা বেগম বলেন, ৫ আগস্ট থেকে ছেলে নিখোঁজ ছিল। পরদিন পুলিশের পিকআপ থেকে আগুনে পোড়া লাশ পাননি। লাশের পকেটে আইডি কার্ড দেখে ছেলের লাশ চিনতে পারেন। ৭ তারিখে গাইবান্ধার শ্যামপুর গ্রামে লাশ দাফন করা হয়।

আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্যমতে, আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় হামলার ঘটনায় ১৪ জন নিহত হন। এ ছাড়া আশুলিয়া থানা এলাকায় তিনজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হন।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ বলেন, ভিডিওটি তারা তাদের নজরে এসেছে। বিশেষজ্ঞ টিম সেটি নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে অনেকে চিনতে পেরেছেন বলে তথ্য দিচ্ছেন।  বিষয়টি নিশ্চিত হতে কাজ চলছে।

ইউ

News