ঢাকা,

২২ ডিসেম্বর ২০২৪


সংগীতশিল্পী জুয়েলের স্মরণে গান, কবিতা ও আলোচনায় ‘সেদিনের এক বিকেলে’

মাজহারুল ইসলাম মিচেল

প্রকাশিত হয়েছে: ২০:১৯, ৭ অক্টোবর ২০২৪

সংগীতশিল্পী জুয়েলের স্মরণে গান, কবিতা ও আলোচনায় ‘সেদিনের এক বিকেলে’

প্রয়াত বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল স্মরণে ‘সেদিনের এক বিকেলে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। গতকাল রাজধানীর মহিলা সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। 

অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্মৃতিচারণের মধ্যদিয়ে জুয়েলের সংগীত জীবন, কর্মজীবন ও বন্ধুত্বের নানা দিক উঠে আসে। সংগীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার, রাশিদ খান ও মাসুদুজ্জামান এর উপস্থাপনায় স্মৃতিচারণমূলক আলোচনায় অংশ নেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নকীব খান, গীতিকার জুলফিকার রাসেল, নির্মাতা সৈয়দ আওলাদ, আ কা রেজা গালিব, মিডিয়া ব্যাক্তিত্ত গাউসুল আলম শাওন, আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফাসহ জুয়েলের পরিবার ও নিকটতম বন্ধুরা। এছাড়া, দেশের টেলিভিশন মাধ্যম, সংবাদপত্র এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার জুয়েলের গাওয়া জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করেন এবং শিমুল মুস্তাফা আবৃত্তি করেন। এছাড়া, অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনের মাধ্যমে জুয়েলের বৈচিত্র্যময় জীবনের বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়।   
শিল্পীর নিকটতম বন্ধুরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বন্ধু জুয়েলের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন বলে আয়োজকরা দাবি করেন।

বাংলাদেশে মেলোডি ধাচের গানে দর্শক শ্রোতার কাছে প্রিয় নাম জুয়েল। তিনি ১০টি একক এ্যালবাম সহ ৫০ এর অধিক যৌথ অ্যালবামে গান করেন।  তার গানের মধ্যে ‘সেদিনের এক বিকেলে’, ‘চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে’, ‘সামনে তোমার চাঁদের পাহাড়’, ‘আমার আছে অন্ধকার’, খুব সকালে’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক আইয়ুব বাচ্চু (প্রয়াত) এবং বাপ্পা মজুমদারের সূর ও সংগীতায়োজনে এসকল গান শ্রোতার হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেয়। এছাড়াও তিনি দেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পীদের সংগে কাজ করেছেন। বাংলা আধুনিক গানে দেশজ স্বকীয়তা বজায় রেখে জুয়েলের গাওয়া গান বাংলা গানে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। 

হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। দেশের টেলিভিশন মিডিয়ায় সফল অনুষ্ঠান নির্মাতা হিসেবেও সমাদৃত। ‘বলতে চাই’, ‘মিথস্ক্রিয়া’, ‘মিউজিক ক্যাফে’, ‘লাক্স সুপার স্টার’, নতুন ঢাকের বাজনা, ‘সরাসরি’ তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। এছাড়াও, ‘সেরা রাঁধুনি’, ‘স্পেলিং বি’, ‘বাউলিয়ানা’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’ ইত্যাদি  রিয়ালিটি শো-গুলো দর্শকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। 

জুয়েল চ্যানেল আইয়ের হেড অফ ইভেন্ট এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে হেড অফ প্রোগ্রাম হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সফল ইভেন্ট আয়োজক। দেশ ও দেশের বাইরে তারকাদের নিয়ে অনেক বড় ইভেন্টের আয়োজন করে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে বহু তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। একজন উপস্থাপক হিসেবেও তিনি টেলিভিশন ও টেলিভিশনের বাইরে নানা অনুষ্ঠানে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।  

তিনি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থা এবং আন্তজার্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং কর্পোরেটদের জন্য ডকুমেন্টারী, বিজ্ঞাপনচিত্র, সচেতনতামূলক অডিও-ভিজ্যুয়াল নির্মাণ করেন। পেশাগত জীবনের বাইরে ফটোগ্রাফি ও ভ্রমণ ছিল তার অন্যতম শখ। সময় পেলে বন্ধুদের নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতেন। শখের বশে ছবি তুলতেন। তার ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছিল। 

গত ৩০ জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন দূরারোগ্য ক্যানসারে ভূগছিলেন।

News