ছবি: বিজসেন আই
লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা ও জেন্ডার সাম্যতার জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় গুলশানের লেকশোর হোটেলে ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং বহ্নিশিখার যৌথ উদ্যোগে "আন্তঃপ্রজন্মভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নারী আন্দোলন শক্তিশালী করি" শীর্ষক প্রকল্পের চলমান কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে তৈরিকৃত দাবিনামা সকবারর সামনে উপস্থাপনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সভাপতির বক্তব্যে আরো বলেন, আজকের দাবিনামা উপস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলে মনে করি। জেন্ডার জাস্টিস প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে দেশে সারা পৃথিবীতে নারী আন্দোলন অবিরাম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আমরা সম্মিলিতভাবে অগ্রসর হতে চাই। সমাজে ক্ষমতার অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে পুননির্মাণের জন্য নারীর সম্পত্তির অধিকার, গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়ন, কেয়ার সার্ভিসের মূল্যায়ন, নিরাপদ- সহজবোধ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, বিয়ে ও বিয়ে বিচ্ছেদের সম অধিকার দিতে হবে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মপরিকল্পনা, তৈরির ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে নারী আন্দোলন ও রাষ্ট্রকে সক্রিয় থাকতে হবে। দায়বদ্ধতার জন্য শিক্ষার সুযোগ, মানবিকতার আলোকে , লিঙ্গীয় সমতা প্রতিষ্ঠায় এই দাবিনামা বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, নিজেরা করির সমন্বয়কারী এবং সিপিডি বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য খুশি কবির, বিআইজিডির সিনিয়র ফেলো অফ প্র্যাকটিস মাহিন সুলতান এবং ইউ এন উইমেন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তপতী সাহা। সঞ্চালনা করেন বহ্নিশিখার রুখসাত আলম।
মালেকা বানু বলেন , শতাব্দীকালব্যাপী সারা পৃথিবীতে নারী –পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার ও নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার যে আন্দোলন চলছে। বাংলাদেশের নারী অধিকার কর্মীরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে দীর্ঘদিন ধরে সেই আন্দোলনে শামিল আছেন। এই আন্দোলনের ফলে নারী ও কন্যার প্রতি বৈষম্য দূর করে নারীর ও কন্যার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু সাফল্য আছে এমনটি বলা যায়। ১৯৯৫ সনে অনুষ্ঠিত বেইজিং চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক নারী আন্দোলন একটা নতুন মাত্রা পায়, যা নারীর অগ্রযাত্রার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে । বেইজিং সম্মেলনের পর নারীর অধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেশে দেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা গৃহীত হয় । প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নারী আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই তবে বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মকে নারী আন্দোলনের সাথে কিভাবে যুক্ত করা যায় তা নারী আন্দোলনের জন্য ভাবনার বিষয়। পাশাপাশি বর্তমানের বৈশ্বিক ও জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারী ইস্যূকে রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা কিভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বহ্নিশিখা সকলকে নিয়ে সকল নারীর সমস্যাগুলো ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে । চিহ্নিত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে আগামী দিনের নারী আন্দোলনকে আরো কিভাবে বেগবান করা যায়, সেবিষয়ে আলোচনার জন্য আজকের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা ইউ এন উইমেন এর সহযোগিতায় চলমান কর্মসূচির আওতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মূল থিম কেউ যেন বাদ না পড়ে যায়- এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নারী আন্দোলনের দাবিনামা তৈরির জন্য বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে।
তিনি বলেন, সরকারি নীতি নির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা, তৃণমূলের নারী নেত্রী, সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, যৌনকর্মী, তরুণ নেতৃবৃন্দ, ভিন্ন লিঙ্গের মানুষ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত ও সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তৈরি করা দাবিনামাটি সকল নারীর কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরার মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসন করে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের মেনে নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় সাম্য, সমদর্শিতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমতা প্রতিষ্ঠায় নারী-পুরুষ উভয়ই অংশীজন । সমাজ, রাষ্ট্রে পরিবারে সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলে প্রকৃত সমতা আসবে না। উন্নয়নে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
সামিনা ইয়াসমিন বলেন, নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে প্রজন্মের সাথে প্রজন্মের একত্র হয়ে কাজ করা জরুরি। দাবিনামা তৈরিতে মূল ইস্যূ ছিলো শিক্ষা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, প্রজনন স্বাস্থ্য, আইনী সংস্কার, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্নের প্রভাব, জেন্ডার রেসপনসিভ বাজেটিং, সুশাসন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারসমূহ তুলে ধরা । পাশাপাশি এই বিষয়গুলোতে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ উপস্থাপন হয়েছে।
ইউ