ঢাকা,

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪


ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯:৫৮, ২৭ আগস্ট ২০২৪

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা

ছবি সংগৃহীত

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন বিষয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বেলা ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টিসিবি অডিটোরিয়াম (টিসিবি ভবন ২য় তলা, ১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা)-এ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।    

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান।

এছাড়াও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জনাব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জনাব ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জনাব মো: মেহেদী হাসান, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (উপসচিব) জনাব বি এম মশিউর রহমান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন এর উপপরিচালক জনাব মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন সরকার, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সহকারী প্রধান জনাব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সহকারী পরিচালক জনাব নূর উদ্দিন যোবায়ের, কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জনাব পলাশ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। অত:পর তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

কর্মশালার শুরুতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) জনাব ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন কর্মশালায় উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে অধিদপ্তর মূলত ৩ ধরনের কাজ করে থাকে; ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি এবং গ্রাহকদের দায়েরকৃত অভিযোগ নিষ্পত্তি। বাজার তদারকি কার্যক্রমে শিক্ষার্থীগণ সংযুক্ত হওয়ার ফলে তদারকি কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে। কর্মশালা শেষে শিক্ষার্থীগণ বাজার তদারকিতে আরও সমৃদ্ধ হবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তার ব্যক্ত শেষ করেন। 

ভোক্তা-অধিকার আইন বিষেয়ে প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (গবেষণাগার) জনাব জান্নাতুল ফেরদাউস।

অত:পর অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম ভিত্তিক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কর্মশালায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব ফাহমিনা আক্তার এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জনাব আব্দুল জব্বার মন্ডল বাজার তদারকিতে তাদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত বক্তব্য তুলে ধরেন।

অত:পর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন, ২০১৮ বিষয়ে প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন, উপপরিচালক জনাব মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন সরকার।

কর্মশালায় নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ বিষয়ে প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন, উপপরিচালক (উপসচিব) জনাব বি এম মশিউর রহমান।

কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জনাব পলাশ মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন। তিনি অধিদপ্তরের আইন সংশোধনসহ জনবল সমস্যা সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক গঠিত প্রকৃত কমিটির মাধ্যমে বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করার অনুরোধ জানান। 

কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জনাব জান্নাতুল ফেরদৌস কর্মশালা আয়োজনের জন্য অধিদপ্তরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কর্মশালা শেষে সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় গাইডলাইন নিয়ে আমরা ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাব।

কর্মশালায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী জনাব মো: ফারহান আতিফ (লুমিন) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে বাজার তদারকিতে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন। 

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি আজকের মতবিনিময় সভার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী কর্তৃক দেশব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তদারকি কার্যক্রম অধিদপ্তরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অধিদপ্তর শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অন্যতম প্রধান কাজ বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা। সে প্রেক্ষিতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বাজার তদারকি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে আজকের এই কর্মশালা।

তিনি সভায় ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখন সুযোগ এসেছে বাজারকে একটা স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। তিনি আরও বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তারা জাতীয় বীর। আমরা যা পারিনি শিক্ষার্থীগণ তা করে দেখিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি দপ্তর হিসেবে সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে অধিদপ্তর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।  

আলোচনায় মহাপরিচালক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হিসেবে আর্ন্তজাতিক বাজারের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সমস্যা ইত্যাদি বিষয়ে বলেন। তবে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোন অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অধিদপ্তরের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করেন। পরিশেষে তিনি বাংলাদেশকে একটি অবাধ উন্নয়নের দেশ হিসেবে গঠনের লক্ষ্যে তরুণ ছাত্র সমাজকে নিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

কর্মশালায় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সহকারী প্রধান জনাব লোকমান হোসেন এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সহকারী পরিচালক জনাব নূর উদ্দিন যোবায়ের ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করেন।

আলোচনায় কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কোষাধ্যক্ষ ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার বলেন, ক্যাব আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তিনি অধিদপ্তর ও সমন্বয়কদের সাথে ক্যাব যুক্ত থেকে কাজ করতে চায় বলে জানান।

অত:পর কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সহ আজকের কর্মশালার বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সভার শেষ পর্যায়ে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও মতামত প্রদানের জন্য সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নামে অসাধু চর্চা না করতে পারে সে বিষয়ে সকলকে সর্তক থাকার আহবান জানান। তিনি মতবিনিয়ম সভায় সকলের সমন্বিত কাজ করার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সহজ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সভায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

ইউ

News