ঢাকা,

০২ এপ্রিল ২০২৫


পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্য

বিজনেস আই ডেস্ক

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯:৫৫, ৩০ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২০:০৩, ৩০ মার্চ ২০২৫

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন: সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্য

ফাইল ছবি

ঈদুল ফিতর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপিত হয়, যা প্রতিটি দেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় প্রথাকে প্রতিফলিত করে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায়, এই উৎসব বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপিত হয়, যা দেশের সমাজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের বিশেষ প্রকাশ।

অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ার ফতোয়া কাউন্সিল ঘোষণা করেছে যে, দেশটিতে সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। শনিবার রাতে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায়, রমজান মাস পূর্ণ ৩০ দিন হবে। ঈদ উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি, স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

সৌদি আরব:
সৌদি আরবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায়, রবিবার (৩০ মার্চ) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। মক্কা ও মদিনায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। ঈদ উপলক্ষে সৌদি সরকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করে, যা মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক। 

ইন্দোনেশিয়া:
ইন্দোনেশিয়ায় চাঁদ দেখা না যাওয়ায়, দেশটি সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতর উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় মসজিদে বিশেষ নামাজ ও ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন।

মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়ায়ও চাঁদ দেখা যায়নি, ফলে সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদ উদযাপিত হবে। দেশটির মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দ উদযাপন করে, পাশাপাশি স্থানীয় মসজিদে নামাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।

বাংলাদেশ:
বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, লক্ষ্মীপুরের ১০টি গ্রামে এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। এতে স্থানীয় মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন।

ভারত ও পাকিস্তান:
ভারত ও পাকিস্তানে সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদ উদযাপিত হবে। উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন শহরে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদের নামাজ আদায় ও আনন্দ উদযাপনে অংশগ্রহণ করবে। 

ব্রুনাই:
ব্রুনাই সরকার ঘোষণা করেছে যে, সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। দেশটির মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় মসজিদে নামাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে, যা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত:
সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ঈদের দিন ঘোষণা করা হয়। দেশটির ফতোয়া পরিষদ ঘোষণা দিয়েছে যে, সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদ উদযাপিত হবে। 

তুরস্ক:
তুরস্কে ঈদ উদযাপনের সময় মুসলিম সম্প্রদায় মসজিদে নামাজ আদায়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। দেশটির ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি 'বাকলাভা' ও 'কনেফে' ঈদে বিশেষভাবে পরিবেশন করা হয়।

মিশর:
মিশরে ঈদ উদযাপনের সময় কায়রোর তাহরির স্কোয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম সম্প্রদায় মসজিদে নামাজ আদায়ের পর, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটায় এবং ঐতিহ্যবাহী মিশরি মিষ্টি উপভোগ করে।

ইরান:
ইরানে ঈদ উদযাপনের সময় তেহরানের ইমাম খোমেনি মসজিদে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম সম্প্রদায় নামাজ আদায়ের পর, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এবং ঐতিহ্যবাহী 'শিরিন' মিষ্টি উপভোগ করে।

তাজিকিস্তান:
তাজিকিস্তানে ঈদ উদযাপনের সময় স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়। দেশটির মুসলিম সম্প্রদায় এই সময়ে বিশেষ করে 'পোলাও' ও 'শিরিন' মিষ্টি প্রস্তুত করে।

উজবেকিস্তান:
উজবেকিস্তানে ঈদ উদযাপনের সময় 'পোলাও' ও 'নান' বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায় মসজিদে নামাজ আদায়ের পর, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করে।

কাজাখস্তান:
কাজাখস্তানে ঈদ উদযাপনের সময় স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়।

সাহারা উপসাহারা আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকা
:
দক্ষিণ আফ্রিকায় "মুন ওয়াচার্স" নামক একটি ঐতিহ্য পালন করা হয়, যেখানে নির্বাচিত ব্যক্তি রমজানের শেষ চাঁদ দেখার জন্য তল্লাশি চালায় এবং ঈদের সমাপ্তি ঘোষণা করে। এই প্রথাটি সম্প্রদায়ের ঐক্য ও উৎসাহকে উজ্জীবিত করে। 

ঈদ উদযাপনের চ্যালেঞ্জ
গাজা-তে, চলমান সংঘাতের কারণে ঈদ উদযাপনের ওপর একটি ছায়া পড়ে। কমিউনিটি খাদ্য ও মৌলিক চাহিদার অভাবের মুখোমুখি হয়েছে, ফলে ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও, ঈদের স্পিরিট রক্ষা করতে লোকজন একত্রিত হয় প্রার্থনায় এবং একে অপরকে সাহায্য করার উদ্যোগ নেয়। 

খাদ্য ঐতিহ্য
ঈদ উদযাপনে খাবারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পাকিস্তানের মাংসজাতীয় খাবার থেকে তুরস্কের মিষ্টি এবং ইন্দোনেশিয়ার সামুদ্রিক খাবারের ঐতিহ্যগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ঈদ একদিকে যেমন ধর্মীয় উপলক্ষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটি বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের একটি প্রতিচ্ছবি। যদিও উৎসবের মৌলিকতা এক, তবে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব ঐতিহ্য ও উপাদান এটি বিশেষ করে তোলে, যা বিশ্বের মুসলিম জাতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের একটি সুন্দর প্রমাণ।

ইউ

News