![যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ দিনে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার সরকারি কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ দিনে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার সরকারি কর্মী](https://www.dailybusinesseye.com/media/imgAll/2023September/bn/download---2025-02-15T131036388-1-2502151315.jpeg)
ফাইল ছবি
সরকারি ব্যয় সংকোচনের জন্য কর্মী ছাঁটাইয়ের যে পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন, তার জেরে গত ২০ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৬ দিনে দেশটিতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ৯ হাজার ৫ শতাধিক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মী। এক প্রতিবেদেন এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহনের পর ‘সরকারি ব্যয় সংকোচন ও কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি’ নামে নতুন একটি দপ্তর খোলার নির্দেশ জারি করেন ট্রাম্প। সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় ইলন মাস্ককে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেস সীকৃতি না দেওয়ায় এখনও মন্ত্রণালয়ের মর্যাদা পায়নি সেই দপ্তর, মাস্ককেও মন্ত্রীর পরিবর্তে ‘উপদেষ্টা’ পদবীতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন থেকেই সরকারী কর্মকর্তা-কর্মীদের ছাঁটাই করা শুরু হয়, যা বর্তমানে প্রায় ১০ হাজারে ঠেকেছে। স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালনি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পুনর্বাসন, কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবিক পরিষেবাসহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মীরা রয়েছেন চাকরিচ্যুতদের তালিকায়। আর এই চাকরিচ্যুতি বা ছাঁটাইয়ের পুরো বিষয়টি ঘটছে ইলন মাস্কের ‘সরকারি ব্যয় সংকোচন ও কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি’র তত্ত্বাবধানে।
শিগগিরই তালিকায় আরও হাজারের অধিক কর্মী যুক্ত হতে যাচ্ছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ কর আদায়কারী সরকারি সংস্থা ইন্টারনাল রেভিন্যু সার্ভিস (আইআরএস) গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে যে সামনের সপ্তাহেই ১ হাজারের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া হবে। আইআরএস যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সরকারি দপ্তর।
ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ‘বাইআউট কর্মসূচি’ বা ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’-এর মুখে পড়েছেন ৭০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা ও কর্মী। সরকারি তথ্য অনুসারে, গত ২০ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ‘বাইআউট কর্মসূচি’-এর আওতায় স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার কমর্কর্তা ও কর্মী।
কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি অনেক সরকারি দপ্তর ও সংস্থায় আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে সেসব দপ্তর-সংস্থা। দেশটির ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা বিষয়ক সরকারি সংস্থা কনজ্যুমার ফিন্যানন্সিয়াল প্রোটেকশন ব্যুরো ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, বাকি বেশ কয়েকটি দপ্তর-সংস্থা বন্ধ হওয়ার পথে আছে।
কর্মীদের গণহারে ছাঁটাই এবং সরকারি সংস্থায় অর্থ বরাদ্দ বন্ধের প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আকার-আয়তন অনেক ‘স্ফীত’ হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে প্রচুর অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি-জালিয়াতি হচ্ছে। গত বছর সরকারের দেনা পৌঁছেছে ৩৬ লাখ কোটি ডলারে এবং বাজেটে ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার। তাই সরকারি ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ এই ছাঁটাই ও বরাদ্দ বন্ধের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের একাধিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, ট্রাম্পের এই ‘সংস্কার কর্মসূচি’তে তার দল রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতাদের সমর্থন থাকলেও বিরোধী দল ডেমোক্রেটির পার্টির কোনো সমর্থন নেই।
‘রাষ্ট্র আমার সাথে বেঈমানি করেছে’
এদিকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হাঠাৎ করে চাকরিচ্যুতির শিকার সরকারি কর্মীরা কিছুতেই এই গণছাঁটাই কর্মসূচি মেনে নিতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনা সদস্য নিক গিয়োইয়া ১৭ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরির পর স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে গত বছর দেশটির অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইউএসডিএ’র অধীন সংস্থা ইকোনমিক রিসার্চ সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। সংস্থাটিতে ট্রাম্প প্রশাসন বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় এখন চাকরি ছাড়তে হচ্ছে তাকে।
“একজন সেনা সদস্য হিসেবে আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টি দেশের সেবায় ব্যয় করেছি। দেশের নিরাপত্তার জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেছি; কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে, যে রাষ্ট্রের জন্য আমি আমার পুরো তারুণ্য উৎসর্গ করেছি, সেই রাষ্ট্র আমার সাথে বেঈমানি করেছে।”
কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের এলিজাবেথটাউন শহরের বাসিন্দা গিয়োইয়া বলেন, “আমার মতো আরও হাজার হাজার কর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন, কিংবা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি কোনো ক্ষেত্রেই এভাবে কর্মী ছাঁটাই করা উচিত নয়। মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে খামখেয়ালিপনা বন্ধ হোক।”
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মীদের ইউনিয়ন ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফেডারেল এমপ্লয়িজের নির্বাহী পরিচালক স্টিভ লেনকার্ট রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে এবং বিদেশে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মীদের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ ৩০ হাজারের এবং তাদের মধ্যে চলতি বছর ১ লাখেরও বেশি স্টাফকে ছাঁটাই করা হবে বলে আশঙ্কা করছে ইউনিয়ন।
টিএইচ