
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় দোকান ভাঙচুরের পর আতঙ্কে পাশের উপজেলা গোপালপুরে ঘুড়ি উৎসব স্থগিত করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকালে গোপালপুর উপজেলার নলীন বাজারের পশ্চিম পাশে যমুনা নদীর চরে এই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার ওই এলাকায় উৎসববিরোধী একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়। এরপর এটি স্থগিত হয়ে যায়।
উৎসবের আয়োজকরা জানান, ওই লিফলেট পাওয়ার পরও তারা ঘুড়ি উৎসব বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভূঞাপুরে ফুলের দোকানে হামলার ঘটনার পর উৎসব না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এর আগে শুক্রবার বিকালে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের ভূঞাপুর থানা সংলগ্ন কলেজ রোডে মামা গিফট কর্নারে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে একদল লোক ভাঙচুর চালান। এ ছাড়া বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এ কারণে ভূঞাপুরে গতকাল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বসন্তবরণ অনুষ্ঠান স্থগিত করে।
পাশাপাশি গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুড়ি উৎসবসহ বিভিন্ন উৎসববিরোধী লিফলেট বিতরণ করে তৌহিদি জনতা। এ কারণে আতঙ্কে ঘুড়ি উৎসব স্থগিত করে আয়োজক কমিটি। ২০১৮ সাল থেকে ‘আমরা গোপালপুরবাসী’ ফেসবুক গ্রুপ, শুভশক্তি বাংলাদেশ ও মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উৎসবের আয়োজন করে আসছিল।
উৎসবের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জু আনোয়ারা ময়না বলেন, ‘২০১৮ সালে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রথম ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে আমরা গোপালপুরবাসী ফেসবুক গ্রুপ, শুভশক্তি বাংলাদেশ ও মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উৎসবের আয়োজন করে আসছিল। প্রতি বছর উৎসবে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তিন থেকে চার শতাধিক শিক্ষার্থী ও তরুণ ঘুড়ি ওড়াতে উৎসবে আসেন। এ উপলক্ষে সেখানে লোকজ গানের আয়োজন করা হয়। এবার ঘুড়ি উৎসবের বিরোধিতা করে শুক্রবার বিকালে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে সরাসরি এসে কেউ বাধা দেননি। এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে শুক্রবার ভূঞাপুরে ফুলের দোকানে ভাঙচুরের ঘটনার পর আতঙ্কে ঘুড়ি উৎসব স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসি আমাকে ফোন করেন। তাদের পক্ষ থেকে উৎসব করার জন্য বলা হয়েছে। তারা সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করা নিরাপদ মনে করছি না। তাই আপাতত উৎসবটি স্থগিত রেখেছি।’
উদীচী ভূঞাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসের বিভিন্ন ঘটনার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বসন্তবরণের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সময়ে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করা হবে।’
গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তাদের ঘুড়ি উৎসব উদযাপনের জন্য বলেছি ও সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। কিন্তু আয়োজক কমিটি আপাতত ঘুড়ি উৎসবটি স্থগিত রাখার কথা বলছেন।’
টিএইচ